ঢালচরে প্রকাশ্যে গাছ কাটায় উজাড় হচ্ছে বন
সরকার চরাঞ্চলের বনায়ন রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখলেও প্রতিদিনই এসব সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে। তেমনি ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচর বনের গাছ প্রকাশ্যে কেটে ফেলছে অসাধু ব্যক্তিরা। সেখান থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রলার বোঝাই করে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।
এসব গাছ কাটার সঙ্গে স্থানীয় বনবিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর বন বিভাগকর্মীদের দাবি, স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জড়িত।
দ্বীপজেলা ভোলার সর্ব দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনায় অবস্থিত ঢালচর ইউনিয়ন। মেঘনার মাঝে জেগে উঠা চর আর বন দেখে মন জুড়িয়ে যায় আগত পযর্টকদের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত পর্যটক আসেন প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য দেখতে। এসব বন হরিণ, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা জীবজন্তুর অভয়াশ্রম। একাধিক চরে বনায়ন থাকায় ঝড় আর জলোচ্ছ্বাস থেকেও রক্ষা পাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ আর গৃহপালিত পশু।
অভিযোগ উঠেছে, সেই বনায়ন উজাড় করে ফেলছে স্থানীয় ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস এবং স্থানীয় অসাধু ব্যক্তি নীরব চৌকিদার, কাওসার ফরাজী, শরীফ সওদাগর, এলাহী, সবুজ, জসিম, রহিম প্রমুখ অসাধু ব্যক্তি ।
পাঁচ-ছয় মাস ধরে প্রতিদিন ১২ থেকে ২০ জন মিলে এই বনের গাছ কাটার কাজ করছে। বনের গাছ কাটার কাজ করায় শ্রমিকদের এক হাজার টাকা করে মজুরি দেওয়া হচ্ছে। যার প্রমাণ মিলেছে ঢালচর বনবিভাগের অফিস সংলগ্ন বিশাল বনে ঢুকেই। স্পিডবোটের শব্দ আর বনদস্যুদের সোর্সরা বলে দেওয়ায় তারা দ্রুত বনের গভীরে চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় তারা গাছ কাটার করাত, জামা, জুতা আর খাবার পানি ফেলে যায়। বনের ভেতর ঢুকতেই নজরে আসে, ছরিয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে কেটে ফেলে রাখা গাছের টুকরোগুলো। বনজুড়েই কেটে ফেলে রাখা গাছ আর গাছের টুকরো। যা দেখার পরে যে কেউ বুঝতে পারবে কীভাবে গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে বন।
কেটে ফেলে রাখা এসব গাছের ভিডিও করার একপর্যায় বনদস্যুরা বিভিন্ন ধরনের শব্দ আর গাছে ঢাল ভেঙে হামলার প্রস্ততি নিচ্ছে এমন আভাস পেয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হয়। তবে বনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিদের মুখে উঠে আসে জড়িতদের কথা। তারা জানায় ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব গাছ।
নিরাপত্তার জন্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বনের গাছ কাটায় অংশ নেওয়া দুই শ্রমিক জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাদের মজুরি হিসেবে এক হাজার টাকা করে প্রতিদিন দিচ্ছে। পাঁচ-ছয় মাস ধরেই বনের গাছ কাটা হচ্ছে। এর সঙ্গে অসাধু ঢালচরের ব্যক্তির সঙ্গে স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জড়িত বলেও তারা জানান।
শ্রমিকরা বলেন, ‘বনবিভাগ জড়িত বলেই আমরা নিরাপদে গাছ কাটতে পারছি। কারণ বনবিভাগের অফিসের পাশেই এসব বন।’
বনের গাছ কাটার পর ট্রলারে বোঝাই করে চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইটভাটায় যাচ্ছে বলেও তারা জানান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, যারা এসব বনায়ন ধ্বংস করার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এদিকে ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাসের কাছে ঢালচরে বসেই ফোনে জানতে চাইলে তিনি বনের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িতদের জানিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার স্বার্থে সেই স্থান ত্যাগ করা হয়।
চন্দ্র শেখর দাস মুঠো ফোনে প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্নভাবে অনুনয়-বিনয় করেন। এ ছাড়া সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য একাধিক ব্যক্তি নানাভাবে অনুরোধ করেন এবং হুমকিও দেন।
এদিকে ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, ‘নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার বাইরে আমি। এসব ঘটনা আমার জানা নেই। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, প্রশাসন তদন্ত করলে আমি তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব।’
অপরদিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়সার বলেন, যারা বনের গাছ কাটছে তারা কাদের লোক? এরা সালামের লোক (চেয়ারম্যান), স্থানীয় প্রশাসনের লোক। বনের গাছ কাটার সঙ্গে তার রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জড়িত আছেন—এমন অভিযোগের শুনেই তিনি রেগে যান। তিনি বলেন, বন কাটা হচ্ছে আমি জানি, সব জানি।’
ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নে বলেন, জেলা প্রশাসক ওপুলিশ সুপারকে জানিয়েছি কোনো লাভ হচ্ছে না।
প্রতিবেদক বক্তব্য নেওয়ার সময় ঢালচরে বনের গাছ কাটা হচ্ছে—এমন খবর পেয়ে গাছ কাটার জন্য আনা করাতসহ অন্যান্য যন্ত্র জব্দ করান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তবে কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হয়নি।