তবু সন্তানকে কাঁধ থেকে সরাননি বাবা
মুরসালিন। চার বছর বয়স। জন্মের পরপরই মাকে হারায় মুরসালিন। তারপর থেকে ছেলেকে কখনো একা থাকতে দেননি বাবা আবদুর রহমান। শত কষ্টের মধ্যেও সব সময় আগলে রেখেছে মুরসালিনকে।
মুরসালিনের মা মারা যাওয়ার পর বাবাই হয়ে ওঠেন তার একমাত্র সঙ্গী। আদর, খেলা কিংবা আনন্দে সব সময় পাশে থাকেন আবদুর রহমান। শুধু তাই নয়, ঘরে কিংবা বাইরে, যেখানেই যেতেন; সঙ্গে রাখতেন শিশু সন্তান মারসালিনকে।
সর্বশেষ দুই বছর ধরে কাজের সময়ও একমাত্র সন্তানকে কাঁধে কাঁধে রাখেন বাবা। মুরসালিনকে কাঁধে রেখেই আবদুর রহমান রোজগারের আশায় গলায় ঝোলান পান-সিগারেটের পাত্র!
আজ মঙ্গলবার সকালে পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় দেখা যায় আবদুর রহমানকে। দেখা যায়, তাঁর কাঁধে আছেন মুরসালিন। একই সঙ্গে গলায় ঝোলানো পান-সিগারেটের পাত্র।
আবদুর রহমান যখন সন্তানকে কাঁধে রেখে হেঁটে হেঁটে পান-সিগারেট বিক্রি করছিলেন, তখন তাঁর দিকে দৃষ্টি ছিল অনেকের। বাসে বসে থাকা যাত্রী, রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকা লোকজন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেয়ে ছিলেন বাবা-ছেলের দিকে।
সবার দৃষ্টি যখন বাবা-ছেলের দিকে, ঠিক এমন একটি সময়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আবদুর রহমানের সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী মারা যায় আরও চার বছর আগে। তারপর চিন্তায় পড়ে যাই, সন্তানকে বড় করব কীভাবে? এরপর সিদ্ধান্ত নিই, সব ছেড়ে এখন আমার কাজ মুরসালিনকে গড়ে তোলা। তারপর থেকে প্রায় সময় বাসায় থেকেছি। কারণ, ছেলে তখন আমার খুব ছোট।’
আবদুর রহমান আরও বলছিলেন, ‘আজ দুই বছর হলো রাস্তায় হেঁটে হেঁটে পান-সিগারেট বিক্রি করি। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছেলেকে কাঁধে রাখি। এরপর বাসায় যাই। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা এলাকায় ছেলেকে নিয়ে থাকি। শুধু এই সন্তানের কথা চিন্তা করে আজ পর্যন্ত বিয়েও করিনি। আগামীতেও বিয়ে না করার চিন্তা আছে।’
গল্পের ছলে মুরসালিনের বাবা বলেন, ‘পুরান ঢাকার কোর্ট-কাচারি এলাকায় পান-সিগারেট বিক্রি করি। সারা দিন যা আয় করি তা দিয়ে বাবা-ছেলের সংসার চলে যায়। ছেলেকে লেখাপড়া করানোর ইচ্ছে আছে। বাকিটা আল্লাহর দয়া।’