দোহায় আটকে তিন বাংলাদেশি, ফেরার পথ জানেন না!
মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া (৫৯), তাঁর স্ত্রী রাফিজা আফরোজ (৪৮) ও আরেক নারী রায়হানা বেগম (৬৩) ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাতাতের দোহা বিমানবন্দরে আটকা পড়ে আছেন। যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ থেকে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার পরও তাদেরকে বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল কাতার এয়ারওয়েজ।
সেজন্য গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে সুইডেন থেকে তাঁরা কাতারের দোহা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁরা দোহাতে পৌঁছান।
দোহা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাদের তিনজনকেই জানানো হয়, তাঁরা আর বাংলাদেশে যেতে পারবেন না। সুইডেন ফেরত যেতে হবে।
একথা শুনে মোজাম্মেল হক তাদেরকে বলেন, ‘আমাদের তো সুইডেনের ট্রাভেল ভিসা শেষ।’ এরপর কাতার এয়ারওয়েজ তাদের তিনজনের পাসপোর্ট নিয়ে নেন।
‘২৫ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও সেই পাসপোর্ট এখনো ফেরত দেয়নি কাতার এয়ারওয়েজ। অথচ এয়ারওয়েজের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাড়লে কাড়বে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো আজ মঙ্গলবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে বলছিলেন মোজাম্মেল হক ভূঁইয়ার ছেলে আকিব জাভেদ।
আকিব জাভেদ বলেন, ‘আমার বাবা-মা ও আরেকজন নারী- তারা তিনজনই বয়স্ক মানুষ। তাদেরকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় তাদেরকে এখনো বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি বিছানা। ২৪ ঘণ্টা ধরে তাদেরকে বিমানবন্দরের ট্রানজিট ডেস্কের সামনে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কারোর শরীর আর চলছে না।’
আকিব জাভেদ বলেন, ‘এর ভেতরে আমার বাবা-মাকে কাতার এয়ারওয়েজ অফার করে ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে কী করবে বা কীভাবে দেশে ফিরতে পারবে সেই ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি তাদের। বলা হয়েছে, তাদের জাকার্তা বিমানবন্দরে নামিয়ে দেওয়া হবে। এরপর কী হবে তাও জানেন না কাতার এয়ারওয়েজ। ইন্দোনেশিয়া থেকেও তো আপাতত এ অবস্থায় বাংলাদেশে ঢুকতে দেবে না। তাহলে তারা এখন কী করবেন?’
আকিব জাভেদ আরো বলেন, ‘কাতার এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার জন্য। আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা আমাদেরকে সঠিকভাবে কিছুই বলেনি। আমাদেরকে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। কখন ভাববেন আর কখন কী করবেন তাহলে? তারা কি এয়ারপোর্টেই কয়েকদিন কাটাবেন?’
আকিব জাভেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুইডেনে থাকা গর্ভবর্তী মেয়েকে দেখার জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি সেখানে যান মোজাম্মেল হক। ১৬ মার্চ তাঁদের ফেরার টিকিট কাটা হয় কাতার এয়ারওয়েজে। গত শনিবার বাংলাদেশ সরকার ইউরোপের সব দেশ থেকে আকাশপথে যাত্রী আসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে—এমন তথ্য জানার পর মোজাম্মেল হক এয়ারওয়েজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কাতার এয়ারওয়েজ জানায়, তারা মোজাম্মেলসহ তিনজনকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে পারবে।
আরো জানা গেছে, সেই হিসেবে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আমরা স্টকহোম বিমানবন্দর থেকে কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর ১৭০ ফ্লাইটে উঠেন তারা। স্টকহোম এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের স্টকহোম-কাতার এবং কাতার-ঢাকা দুটি বোর্ডিং পাসই দেওয়া হয় তাদেরকে। কাতার থেকে ঢাকায় আসার জন্য দোহা বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ৬টা ৫ মিনিটে তাদেরকে নিয়ে কিউআর ৬৩৮ ফ্লাইটে আসার কথা ছিল। এই বোর্ডিং পাস পেয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন তাঁরা ঢাকায় পৌঁছাবেন। পরে কাতার সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে কাতারের দোহা বিমানবন্দরে কিউআর ১৭০ ফ্লাইটটি পৌঁছায়। ফ্লাইটটিতে তিন বাংলাদেশিসহ ১১ থেকে ১২ জন যাত্রী ছিলেন। দোহায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মোজাম্মেলদের জানানো হয়, তাদের ঢাকায় নেওয়া হবে না। সুইডেনে ফেরত যেতে হবে।