নরসিংদীতে ইউপি নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৪
নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। এ সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চার জন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ সংঘর্ষ ঘটে।
এরই মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত ১০ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তাহের নামের একজনকে হাসপাতাল থেকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত চার জনের মধ্যে তিন জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন নেকজানপুর গ্রামের কটু মিয়ার ছেলে আমির হোসেন (৪৫), একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে আশরাফুল (২২) ও আব্দুল মনু মিয়ার মেয়ে খুশি বেগম (৫০)। তাঁরা সবাই আলোকবালী ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থক বলে জানা গেছে।
আহতরা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, খায়রুল (২৮), বাদশা মিয়া (৩২), আবুল খায়েল (৪০), হানিফ (৪৫), আনিস মিয়া, আব্দুল লতিফ (৪৫), আহসানুল্লাহ (২৬), শওকত মিয়া (২৪), আরিফ (২২), সোনিয়া (১৭), মমিন আলী (৫৫), মাসুমা (২০), মকবুল হোসেন, আকাশ (১৪), জিয়াউর (৩৭), হাসেম (৪৮) মিজান ও বুলু (৫৫)। তারা সবাই চেয়ারম্যান দীপুর সমর্থক।
পুলিশ জানিয়েছে, আলোকবালী ইউপির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ’র সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে ১০ দিন আগে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছিল।
সর্বশেষ আলোকবালী ইউপির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু। এ সময় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ আসাদ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আসাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। পরে দলীয় নেতাকর্মীদের চাপে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এ নিয়ে আসাদুল্লাহ’র সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই জের ধরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আসাদুল্লাহ’র সমর্থক আবুল খায়েরের নেতৃত্বে অস্ত্র নিয়ে নেকজানপুর গ্রামে দীপু চেয়ারম্যানের সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় দীপুর সমর্থক রিপন মোল্লা প্রতিহত করার চেষ্টা চালান। এ সময় উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিপক্ষ আবুল খায়েরের লোকদের হামলায় রিপনের তিন জন সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হন আরও ১০ জন। টেটাবিদ্ধসহ আহত হন অন্তত ৩০ জন। পরে ঢামেকে নেওয়ার পথে আরও একজন নিহত হন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হওয়া বাকি সবাইকে ঢামেকে হাসপাতালে পাঠানো করা হয়েছে।
তবে, হামলা-সংঘর্ষ ও হতাহতের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন আলোকবালী ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুন হাসান। তাঁর অভিযোগ, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, তা আমরা আগেই টের পেয়েছিলাম। তাই পুলিশকে জানিয়েছি। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের জন্য আজ এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সক্রিয় থাকলে এ চারটা লোক মারা যেতেন না। সংঘর্ষের সময় আমরা পুলিশকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু, তারা আসেনি। পুলিশ আসাদুল্লাহ’র বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাড়ি পাহারা দেয়। কিন্তু, আমাদের বাঁচায়নি।’
টেটাবিদ্ধ হয়ে আহত মমিন আলীর অভিযোগ, ‘সকাল বেলা হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি কাইয়ুম ও রিপনের নেতৃত্বে শত শত লোক অস্ত্র নিয়ে মানুষের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় অনেক বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয় এবং আগুন দেওয়া হয়।’
এ ঘটনায় আলোকবালী ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু বলেন, ‘নির্বাচনে আসাদুল্লাহ ভাই আমাকে সমর্থন জানিয়ে মনোনয়ন তুলে নিয়েছিলেন। ভেবেছিলাম, তাঁরা আমার সঙ্গে মিলে গেছেন। কিন্তু না, তাঁরা আমাকে মেনে নিতে পারছেন না। তাই, নানা অজুহাতে আসাদুল্লাহ ভাই ও তাঁর সমর্থকেরা আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় এবং চার জনকে গুলি করে হত্যা করে। আমি এর বিচার চাই।’
অন্যদিকে, আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ বলেন, ‘এ ঝগড়ায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি দীপুকে সমর্থন জানিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। গ্রামে ঝগড়া যেন না হয়, তার জন্য ঊর্ধ্বতন নেতাকর্মীসহ পুলিশের সঙ্গে বসেছি। তাদের সহযোগিতাও চেয়েছি। কিন্তু দুই মেম্বার সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে চার জন মারা যান। এর মধ্যে আমির হোসেন নামে আমার এক আত্মীয়ও মারা গেছেন।’
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, ‘আলোকবালীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশ যাওয়ার আগেই তিন জন নিহত হন। আহত হয় বেশ কয়েকজন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’