নরসিংদীতে ফের সংঘর্ষ, হয়নি মামলা, উদ্ধার হয়নি অস্ত্রও
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালীতে ফের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আলোকবালী উত্তরপাড়ায় পুনরায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় প্রতিদ্বন্দ্বী দুই ইউপি মেম্বার পদপ্রার্থীর সমর্থকরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে, দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনার একদিন পেরিয়ে গেলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। চরঞ্চলগুলোতে বিপুল অস্ত্রের মজুদ থাকলেও এসব জব্দ করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। এমনকি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার হয়নি। চারটি হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহতের জের ধরে আজ বিকেলে পুনরায় সংঘর্ষ বাধে।
আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আলোকবালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থক ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার পদপ্রার্থী মামুন সমর্থক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লহর সমর্থক ইউপি মেম্বার পদপ্রার্থী জব্বর মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দুজন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলায়।
নরসিংদী সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনও মামলা করা হয়নি। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোকবালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহর সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরই মধ্যে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ আসাদ। সর্বশেষ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আসাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ আরও তীব্র হয়। পরে দলীয় নেতাকর্মীদের চাপে আসাদুল্লাহ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এ নিয়ে আসাদুল্লাহ সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই জেরে গতকাল সকালে আসাদুল্লহর সমর্থক রিপন মোল্লার সমর্থকরা সকালে টেঁটা, বল্লম ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নেকজানপুর গ্রামে দীপু চেয়ারম্যানের সমর্থক আবু খায়েরের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। পরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নেকজানপুর গ্রামের আমির হোসেন (৪৫), একই গ্রামের আশারাফুল (২২), খুশি বেগম (৫০) ও খায়রুল ইসলাম নিহত হন। ওই সময় গুলিবিদ্ধ ১০ জনসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অন্যদিকে ময়নাতদন্ত শেষে আজ দুপুরে জানাজার পর তাদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।