নরসিংদীতে মুক্তিপণ না পেয়ে কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা
মুক্তিপণ না পেয়ে মিঠু হোসেন নামের এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় একটি বাড়ির খড়ের গাদার নিচে মিলেছে তাঁর মরদেহ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে সিরাজগঞ্জ থেকে মিঠুর পরিবারের সদস্যেরা মনোহরদী থানায় শনাক্ত করেন মিঠুকে।
নিহত মিঠু হোসেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রায়পুরের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জের একটি কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মিঠু অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করতেন।
নিহতের স্বজনেরা জানান, মিঠু বিভিন্ন হাট থেকে শাড়ি কিনে অনলাইনে বিক্রি করতেন। নরসিংদীর বাবুরহাট থেকে কাপড় কিনে বিক্রির ইচ্ছা ছিল তাঁর। এজন্য গত বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জ থেকে নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হন তিনি। নরসিংদীর পথে ঢাকায় পৌঁছানোর পর এক আত্মীয়ের বাড়িতে দুপুরের খাবার খান। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুঠোফোনে পরিবারের সদস্যদের কাছে নরসিংদী পৌঁছানোর খবর জানান। এরপর রাত ৮টার দিকে তাঁকে অপহরণ করে মারধর করা হচ্ছে বলে জানান মিঠু।
স্বজনেরা আরও জানান, ফেসবুকে পরিচয় হওয়া দুই বন্ধুর ভরসায় নরসিংদীতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন মিঠু। তবে তিনি সেখানে কার কাছে গিয়েছিলেন, তা তাঁরা জানেন না।
মিঠুকে অপহরণ এবং অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় তাঁর বড় বোন মিনু আক্তার মামলা করেছেন। তিনি বলেন, “বুধবার রাত ৮টার দিকে মিঠু ফোন করে জানায়, তাকে আটকে রেখে অপহরণকারীরা মারধর করছে। এ সময় তার বিকাশ নম্বরে এক লাখ টাকা পাঠানোর কথা বলে। টাকা না পেলে মিঠুকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরপর অপহরণকারী ফোনে আমাকে জানায়, ‘এখন যদি এক লাখ টাকা পাঠান, তাহলে আপনার ভাইকে ছেড়ে দেব। না হলে মেরে ফেলব।’”
মিনু আক্তার আরও বলেন, “রাত ১২টার দিকে মিঠুর সঙ্গে যখন শেষ কথা হয়, তখন সে বলছিল, ‘আপু, তোরা বোধ হয় আমাকে আর বাঁচাতে পারলি না। আমার শেষ ইচ্ছা, মায়ের সঙ্গে একটু কথা বলিয়ে দে।’ মায়ের সঙ্গে মিঠু কথা বলার পর থেকেই সারা রাত মিঠুর ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এর পরেই সিরাজগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে আমরা সাধারণ ডায়েরি করি।’”
মিঠুর বড় বোন বলেন, ‘এরপর আমরা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে মিঠুর মৃত্যুর সংবাদ পাই। পরে মনোহরদী থানায় এসে নিশ্চিত হই। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, ‘মিঠু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’