নারায়ণগঞ্জকে নতুন বউয়ের মতো সাজাতে চান শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জকে নতুন বৌয়ের মতো সাজাতে চান বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। আজ শুক্রবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী, নবীনবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন তিনি।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে অনেকে অনেক কথা বলে, গালাগালি করে, আমি শুনি না। আল্লাহকে চেনার চেষ্টা করছি। গীবত করা যে কত খারাপ, তা কোরআনে বলা আছে। নারায়ণগঞ্জে যারা গীবত গায়, তাদের বলতে চাই, এগুলো করে লাভ হবে না। আমার স্বপ্ন, আমি নারায়ণগঞ্জকে নতুন বৌয়ের মতো সাজাতে চাই।’
জেলা মহিলা সংস্থার সভাপতি সালমা ওসমান লিপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমরা ডিএনডি প্রজেক্ট করেছি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দেশের সবচেয়ে সুন্দর রোড হয়েছে। আমি চাইনি, কিন্তু এটার নাম আমার মায়ের নামে হয়েছে। আমার বড় ভাইয়ের নামে সেতু দিয়েছেন। আমরা দিতে বলিনি, আমাদের বলতে হয় না। আমরা মানুষের ভালোবাসা চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যার সৈনিক হিসেবে কাজ করতে চাই।’
এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হবে। শেখ কামাল আইটি ইনিস্টিউটের কাজ শুরু হবে। এগুলো সব আমরা করছি। কিন্তু এখানে বসবাস করবে কারা?’
নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধপল্লী উঠিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘কেউ একজন ওই নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ সন্তান। যে কি না বিএনপিনেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাইকে হত্যা করেছিল। এই গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে, যে এখন বড় বড় কথা বলে। তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঢাকায়। কিছু একটা ঘটাতে চায়।’
শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে তারা পুলিশকে আক্রমণ করল। বিএনপির সমাবেশে তারা পুলিশকে আক্রমণ করল। পুলিশ প্রতিরোধ করেছিল। সে সময় একটা ছেলে মারা যায়। আরেকটা গ্রুপ আছে, বিএনপির অনেক মহিলা কাউন্সিলর আছে। বাবুরাইলে বাড়ি। ড্রাগসের ব্যবসা করে তারা। মাদক ব্যবসার জন্য দুজনকে হত্যা করা হয়েছিল। বিএনপির সেক্রেটারি মামুন মাহমুদের ওপর চাকু দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। সে যদি মারা যেত? তাকে আশপাশের মানুষ রক্ষা করে। তারা হয়তো আমাদের ওপর দোষ চাপাত, যেভাবে ত্বকী হত্যার পর এখন আমাদের ওপর দোষ চাপিয়েছে।’
এ সময় ক্ষমা চেয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘জাতির পিতা আপনি আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন। আর আমরা আপনাকে সপরিবারে হত্যা করেছি। পাকিস্তান সাহস পায়নি, ব্রিটিশরা সাহস পায়নি। মোস্তাকরা সাহস করতে পেরেছিল। বাইরে থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে এবং ভেতর থেকে দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।’
নিজের পরিবার প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার রাজনীতি করার কথা। উন্নত বাংলাদেশে থাকার কথা। কিন্তু হত্যা করা হয়েছিল আমাদের শৈশবকে, যৌবনকে। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, আমি তোমাদের চেয়েও ছোট ছিলাম। আমার বাবা সামান্য কিছু অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রতিবাদ গড়ার চেষ্টা করছিলেন। আমার বড় ভাই অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। খন্দকার মোশতাক আমাদের বাসায় ফোন করেছিল। আমি ফোন ধরে বলেছিলাম—আব্বা বাসায় নেই। আমার মা ফোন নিয়েছিলেন। মোশতাকের প্রস্তাবে মা বললেন, ‘আমার স্বামী যদি আপনার মন্ত্রিসভায় যোগ দেন, প্রথমে চেষ্টা করব তাকে হত্যা করতে। তা না পারলে নিজে আত্মহত্যা করব।’
‘ভাত খেতে পাইনি। বড় ভাই সেলিম ওসমান ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। তাঁকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়’ জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, মানুষের সমস্যা দেখলে আমরা পাগল হয়ে যাই। করোনার সময় আমরা পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু করতে পারছিলাম না। শুধু নামাজ পড়ে আল্লাহকে খুশি করতে চেয়েছি। বড় বোনের বিয়ে দিয়েছিলাম মসজিদে জিলাপি দিয়ে। অনেকে সে সময় (টাকা-পয়সা) কামিয়েছিলেন। মানুষের সম্পত্তি দখল করেছিলেন। চোরের মার বড় গলা, লোকে বলে।’
দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বড় ভাইয়ের বিয়ের জন্য আমার বাবা হীরা মহল বন্ধক রেখেছিলেন। ৪৪ হাজার টাকার জন্য আমাদের বাড়ি নিলাম হয়ে গিয়েছিল। আজ যারা কথায় কথায় রূপ বদলায়। কখনো কাক, কখনো কোকিল। তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। অন্য দলের লোকেরাও আমাদের বাসায় এসেছিলেন। কেউ নাস্তা নিয়ে, আবার কেউ চালের বস্তা পাঠাতেন।’