পটুয়াখালীতে ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফি ২০ হাজার টাকা
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দ্বিমুখী সিদ্ধান্তের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের দলীয় ফরম কিনতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকায়। দলীয় এমন সিদ্ধান্তকে প্রার্থীরা আখ্যা দিয়েছেন, মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে।
এসব অনিয়ম নিয়ে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে প্রচণ্ড ক্ষোভ।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার গাজী অভিযোগ করে বলেন, ১ অক্টোবর শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে লোহালিয়া ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে তৃণমূলের কাউন্সিল ডাকা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তৃণমূলের ভোট না নিয়ে প্রার্থী নির্বাচনে তারা একক সিদ্ধান্ত দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে দলীয় অফিস থেকে সবাইকে বের করে দেন। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলে কাউন্সিল থেকে আনোয়ার গাজীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।
আনোয়ার গাজীর অভিযোগ, জেলা মনোনয়ন বোর্ডের এক শীর্ষ নেতার পছন্দের লোককে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতেই তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের তিনবার নির্বাচিত সাবেক ইউপি সদস্য মো. জালাল মৃধা অভিযোগ করে বলেন, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এক জনপ্রতিনিধির হাতে তিনি দলের কাউন্সিলে জেলা মনোনয়ন বোর্ডের সামনেই অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুনে নাজেহাল হয়েছেন। এ ঘটনায় নেতারা প্রতিবাদ না করে অবশেষে ২০ হাজার টাকা নিয়ে একটি মনোনয়ন ফরম হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন।
চেয়ারম্যান পদে আরেক দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কিবরিয়া মাহমুদ মোল্লার অভিযোগ, গত বছর স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ায় তাকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। দলের নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিল না করে বিনা ভোটে পরিকল্পিতভাবে নিজস্ব প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মনোনয়ন বোর্ড। কিবরিয়া বলেন, কোনো কাউন্সিল ছাড়া কীভাবে মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত করা হলো, সে প্রশ্ন রইল কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে।
উল্লিখিত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে সবার মতামত নিয়ে মনোনয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন টায়ারের সিদ্ধান্তে অথবা সরাসরি তৃণমূলের ভোটে প্রার্থী নির্বাচন করা হচ্ছে। কাউন্সিলে কেউ লাঞ্ছিত হয়েছেন, এটা সর্বৈব মিথ্যা অভিযোগ।
সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনিরুজ্জামান জাকির অভিযোগ করেন, গত ইউপি নির্বাচনে তিনি এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জলিল মিয়া চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন। একই দিনে জেলা কার্যালয়ে মনোনয়ন বোর্ডের কাউন্সিল ডেকে কাউন্সিলরদের কোনো মতামত না নিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ বছর তাকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোষণা করে মনোনয়নপত্র বিক্রি করা না হলেও জালাল মিয়াকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। অথচ জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের মনোনয়ন পাবেন না। বিদ্রোহী প্রার্থী হরিণ মার্কার জলিলসহ ছয়জন প্রার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে মনোনয়নপত্র ফি রেখেছেন বোর্ড নেতারা। উল্লেখ্য, মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বর্তমানে কমিটি বিহীন।
মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান জাহাঙ্গির ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম হোসেন আহম্মেদ সিকদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং জেলা কমিটির ৫১ বছর সদস্য চিলেন। তার অভিযোগ, ছয়জন প্রার্থীকে মনোনয়ন বোর্ডে ডেকে তৃণমূল ভোটারদের বের করে দিয়ে আমাদের ফরম রেখে দেওয়া হয়। দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে পরে জানানো হবে বলে তাদের জানায় বোর্ড নেতারা। এ সব ঘটনা নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য ঢাকায় আছেন বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আ. মান্নান বলেন, দলের নিয়মানুযায়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে কোনো মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। মরিচবুনিয়ায় একজন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন কিনেছেন, কিন্তু তিনি প্রত্যাহার করার সময় পাননি। মনোনয়ন ফির জন্য ২০ হাজার টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড টাকা নেয়। আমরাও নেই। আর এ মনোনয়ন বিক্রির টাকা আগত কাউন্সিলরদের পেছনে খরচ করা হয়।
একই অভিযোগ রয়েছে পটুয়াখালী সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে।
জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত তফসিলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই, বড়বিঘাই, মাদারবুনিয়া, মরিচবুনিয়া, আউলিয়াপুর, লোহালিয়া ও বদরপুর ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১১ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল, ২০ অক্টোবর যাচাই বাছাই শেষে ২৬ অক্টোবর প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী ১১ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সীমানা জটিলতা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় পটুয়াখালীর জৈনকাঠি, কালিকাপুর, ইটবাড়িয়া, মৌকরণ ও লাউকাঠি ইউপি নির্বাচন বন্ধ রয়েছে।