পলাশবাড়ীতে আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের পরিবারের বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
নবগঠিত ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম মহিবুল হাসান মুকিত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার বাবা গাইবান্ধা জেলা জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি ছিলেন। মুকিত নিজে কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিল না। তবে মহিবুল হাসান মুকিত বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষতি করতে তার বাবা-মার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ এসেছে। আমরা জেলা আওয়ামী লীগের পরামর্শ অনুযায়ী কমিটি ঘোষণা করেছি। এখন জেলা আওয়ামী লীগকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। ঘটনা সত্য হলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
চলতি বছরের ১৩ মার্চ পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগ।
ওই কমিটিতে সভাপতি পদে উপাধ্যক্ষ শামিকুল ইসলাম লিপন, সহ সভাপতি অধ্যক্ষ সাইফুলার রহমান চৌধুরী তোতা, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের নাম ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার পর পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম মুকিতের বাবা-মা ও মুকিতের জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। দপ্তরে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা অভিযোগ পাওয়ার কথা এনটিভি অনলাইনকে জানান।
অভিযোগকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, মুকিত এর আগে পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমনকি তার বাবা জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা জেলা শাখার সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির ও পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। মুকিতের মা পলাশবাড়ী সরকারি কলেজের ১৯৯২-১৯৯৩ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ছাত্র শিবিরে ভোট প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি নিজে কখনও পলাশবাড়ীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। আমরা সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে সরানোর পাশাপাশি পরিবারের অন্য কাউকে যেন আর কোনো পদে না রাখা হয় এবং এই পদে আওয়ামী পরিবারের কাউকে যেন নিয়োগ করা হয়।
এ বিষয়ে সদ্য ঘোষিত পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও পলাশবাড়ী আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুলার রহমান চৌধুরী তোতা বলেন, মুকিতের নাম আমার পর পরই সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট নিয়ে আছি। প্রকৃত পক্ষে মুকিতের নানা মৌলভী মো. আব্দুস ছামাদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আজিজুর রহমান বিএনসি। তখন আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ছামাদ সাহেবের সঙ্গে। সেই লোকের নাতি মুকিত।
মুকিতের মা যখন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তখন শিবিরের ছেলেদের নিয়ে মিটিং করতেন। বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন। মুকিতের বাবা একজন জামায়াত নেতা। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের বিভিন্ন পদে থেকে মারা যান।
তোতা চৌধুরী বলেন, ৭০ এর নির্বাচনে মুকিতের নানার বিরুদ্ধে ভোটের কাজ করেছি। আমি সব জানি, তাদের সবাইকে চিনি। মুকিত কখনও এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি। আমি সত্য বলতে ভয় পাই না। সারাটা জীবন আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেছি। দুবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, একবার সভাপতি, ২০০৪ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আছি। এবারও বানানো হয়েছে। জামায়াত পরিবারের এই সদস্যকে সহকর্মী হিসেবে নিয়ে কাজ করা খুবই কঠিন হবে।
অভিযোগের বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক ও পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি আলী মোস্তফা রেজা বলেন, পলাশবাড়ীতে ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছি। ৬৮ সালে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলাম। পলাশবাড়ী আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে মুকিত নামে যে ছেলেটা সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছে, তার বাবা জামায়াতের লোক। তাদের বাড়িতে জামায়াতের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। তাদের বাড়ি থেকে ২০০৪-২০০৫ সালের দিকে আমরা শিবিরের মেস উচ্ছেদ করেছি। মুকিতের মা সবসময়ই শিবিরের ছেলেদের বিভিন্নভাবে সুযোগ সুবিধা দিত, এটা নতুন কথা নয়। এই পরিবারের ছেলে সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় আমরা আসলে ব্যথিত। কারণ মুকিতের নানা তৎকালীন সময়ে শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন। সরাসরি রাজাকার ছিলেন।
এ বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিত বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমাকে ক্ষতি করতে আমার বাবা-মার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।’