পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের মুসলমান হিসেবে স্বীকৃতি দিত না : মোজাম্মেল
১৯৭১ সালের আগে পশ্চিম পাকিস্তানিরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দিত না বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আমরা ৫৬ ভাগ মানুষ ছিলাম বাংলাভাষাভাষী এবং উর্দুতে কথা বলত মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ। তখন সারা ঢাকা শহরের কোথাও বাংলায় একটা সাইনবোর্ড বা কোনো গাড়ির নম্বর প্লেটও ছিল না, সবই ছিল উর্দুতে।
স্ক্রিনপ্রিন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, শুধু তাই না, আমাদের দেশে এক ধরনের কাগজ তৈরি হতো চন্দ্রঘোনায়। সেই কাগজে এক ধরনের জলছাপ দিতে হতো। এই কাগজগুলো তৈরি হতো বাংলাদেশে, কিন্তু জলছাপ দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। এরপরে সেই কাগজ আমরা কিনতাম প্রতি দিস্তা পাঁচ আনা এবং পশ্চিম পাকিস্তানিরা কিন্তু চার আনা করে।
তখন কোনো বাঙালি বিদেশে যেতে পারত না এবং কোনো চাকরি-বাকরিও পেত না বলে উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, আপনারা অনেক ভাগ্যবান। দেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে আপনারা কোনো সুযোগ-সুবিধাই পেতেন না।
মন্ত্রী বলেন, তখন এক ধরনের ধর্ম ব্যবসায়ীরা মা-বোনদের গনিমতের মাল হিসেবে বিবেচনা করত। রাষ্ট্রভাষার ধর্ম ব্যবসায়ীরা বলেছে, বাংলা রাষ্ট্রভাষা হলে ইসলাম থাকবে না। ওই সব ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইংরেজি শিক্ষাকে হারাম বলে মুসলিম সমাজকে ১০০ বছরের পেছনে ফেলে দিয়েছিল। এদের পূর্বসূরীরাই খোলাফায়ে রাশেদিনের চার খলিফার মধ্যে তিনজনকে হত্যা করে বলেছিল ইসলাম রক্ষা করার জন্য তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। আসলে আমরা এখন যা জানি তা হলো ইসলাম রক্ষা করার জন্য নয় বরং ক্ষমতা দখল করার জন্যই তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।
মোজাম্মেল হক বলেন, এখনও আমাদের দেশে একটা গ্রুপ রয়েছে যারা স্ট্যাচুকে ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। স্ট্যাচু হারাম হলেও প্রায়োরিটির দিক দিয়ে এটা অনেক পরে। এর আগেও অনেক হারাম রয়েছে, সেগুলোর দিকে তাদের কোনো খবর নাই।
মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে তিনটা ইসলামিক রাষ্ট্র রয়েছে। পাকিস্তানেও ভাস্কর্য রয়েছে, আফগানিস্তানেও ভাস্কর রয়েছে, ইরানেও ভাস্কর্য রয়েছে। পৃথিবীতে মোট মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র ১৯টি। এর মধ্যে ১৮টিতে ভাস্কর্য রয়েছে।
তরুণ-যুবকদের উদ্দেশে মোজাম্মেল হক বলেন, আপনারা এখানে যারা বসে রয়েছেন, তারা এদেশের প্রাণশক্তি অর্থনীতির চালিকা শক্তি। আপনারা দেশকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এটা তাদের ভালো লাগে না। এই জন্যই তারা পাগলের প্রলাপ বকছে।