পহেলা বৈশাখে রাজধানীতে চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা
বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার (পহেলা বৈশাখ ১৪২৯) রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচল ও মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্যে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন।
যেসব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকবে
>বাংলামোটর-হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর।
>হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-কাকরাইল-মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা
>মৎস্য ভবন-শাহবাগ-কাঁটাবন
>পলাশী-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট ক্রসিং
>বকশীবাজার-শহীদ মিনার-টিএসসি
> শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর
> নীলক্ষেত-টিএসসি
যান চলাচলের বিকল্প রুট
> মিরপুর রোড-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নিউমার্কেট-আজিমপুর-বকশীবাজার-চাঁনখারপুল-গুলিস্তান
> রাসেল স্কয়ার-সোনারগাঁও-রেইনবো-মগবাজার-মালিবাগ-রাজমণি-ইউবিএল-গুলিস্তান
> মহাখালী-সাতরাস্তা-মগাবাজার-রাজমণি-ইউবিএল-গুলিস্তান
> ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-খিলগাঁও
> ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামোটর-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমণি-নাইটেঙ্গেল-পল্টন-মতিঝিল
> কাঁটাবন-হাতিরপুল-বাংলামোটর-সোনারগাঁও-ফার্মগেট
> কাঁটাবন-হাতিরপুল-বাংলামোটর-মগবাজার-কাকরাইল-রাজমণি-ক্রসিং-গুলিস্তান-মতিঝিল।
এদিকে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পহেলা বৈশাখ ঘিরে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা। দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু নির্দেশনা। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে হলে শুরু থেকেই অংশ নিতে হবে, পরা যাবে না মাস্ক। এবার মেলাপ্রঙ্গণে থাকবে না খাবারের দোকান। সেখানে শিশুদের না আনার জন্য দেওয়া হয়েছে পরামর্শ।
অন্যদিকে কিছু সংগঠনের তৎপরতার কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম শঙ্কা না থাকলেও, আশঙ্কার কথা বলেছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বরণ উপলক্ষে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘রিসেন্টলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও আমরা কিছু রেডিকালাইজড সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ্য করছি। আমরা কোনো আশঙ্কা করছি না, যে এখানে খারাপ ঘটনা ঘটবে। তবে যেহেতু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করতে চাচ্ছি, সেহেতু কোনো আশঙ্কা আমরা উড়িয়েও দিচ্ছি না। কোনো কিছুই ঘটবে না, সেরকম বলার সুযোগ নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘২০০১ সালে এখানে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালিয়েছিল। সেটাকে মাথায় রেখে যাবতীয় নিরাপত্তার কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি আমাদের কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্র কিছু জঙ্গির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। তাদের ধারণা, ভারতীয় উপমহাদেশে জঙ্গি কার্যকলাপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই ধারণা থেকেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রিসেন্টলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে আমরা কিছু সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ্য করছি। এটার কারণেই মূলত বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সিসিটিভির আওতায় থাকবে পুরো চত্বর
পুরো চত্বরে সিসিটিভি থাকবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘রমনার বটমূলে প্রবেশে চেকপোস্ট থাকবে। চেকপোস্টে চেক না করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কোনো যানবাহন এ এলাকায় চলবে না। রমনা এলাকায় ডগ স্কোয়াড সুইপিং করেছে এবং আগামীকালও করা হবে। রমনা লেকের পানিতে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল থাকবে।’
থাকবে না খাবারের দোকান
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষবরণের মেলায় পান্তা-ইলিশ ও খাবারের দোকান থাকবে না। অনুষ্ঠানটি সীমিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দুপুর ২টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। যাতে মানুষ এখান থেকে বের হয়ে খুব সহজে বাড়ি ফিরে ইফতার করতে পারেন।’
পয়েন্টে পয়েন্টে চেকপোস্ট
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। যেখানে প্রত্যেকটি মানুষকে চেকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এসব এলাকায় সব যানবাহন বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি সোয়াত ও ডিসপোজাল ইউনিট মোতায়েন থাকবে। আজ ও আগামীকাল পর্যন্ত পুরো এলাকা সার্চ করা হবে। পাশাপাশি পুরো চত্বর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বিভিন্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। পুরো এলাকাটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
২০০১ সালে রমনার বটমূলে জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেই হামলাকে মাথায় রেখে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কোন রাস্তা দিয়ে কীভাবে নেওয়া হবে, সেটার জন্য আলাদা দল প্রস্তুত থাকবে।’
মঙ্গল শোভাযাত্রায় মাঝপথে যোগ দেওয়া যাবে না
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দিতে হলে মাঝপথে যোগ দেওয়া যাবে না। পহেলা বৈশাখের বিশেষ আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে হলে আগে চেকিং হয়ে প্রবেশ করতে হবে। মাঝ রাস্তায় চাইলেই কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলে, পুলিশ সদস্যরা কঠোর আচরণ করতে পারে।’
ছোট শিশুদের না আনার অনুরোধ
ছোট শিশুদের না আনার অনুরোধ জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এসব এলাকায় শিশুদের না আনার অনুরোধ করছি। কারণ এসব স্থানে খাবারের কোনো দোকান থাকবে না। মুখোশ পরে আসা যাবে না। উচ্চ শব্দ তৈরি করে এমন বাদ্যযন্ত্র আনা যাবে না।’