পাকিস্তান-নেপালে বিদেশি চ্যানেল ক্লিন ফিডে চলে : তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, দেশের গণমাধ্যম শিল্পের সবার স্বার্থে আমরা আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিন ফিড বাস্তবায়নের কাজ করছি। সুতরাং দেশ ও সবার স্বার্থের বিপক্ষে কেউ অবস্থান গ্রহণ করবেন বা তাদের পক্ষে কেউ ওকালতি করবেন এটি কখনো কাম্য নয়।’
আজ সোমবার দুপুরে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-অ্যাটকো প্রতিনিধিরা ক্লিন ফিড বাস্তবায়নের পদক্ষেপের জন্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে আসেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ড. হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অ্যাটকো সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু, ডিবিসি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল হাসান, দেশ টেলিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, ডিবিসি২৪ চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ বৈঠকে যোগ দেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী দেশের সব গণমাধ্যম, শিল্পী-কলাকুশলীকে এ আইনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিন ফিড বাস্তবায়নের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে দুই বছর আগে থেকে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। আগস্ট মাসের বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল যে, ১ অক্টোবর থেকে আমরা এই আইন কার্যকর করব। কিন্তু এটি নিয়ে একটি মহল থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছে। আমি আশা করব, এই বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে তারা বিরত থাকবেন। সরকার আইন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর এবং প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে সাহস না জোগালে আমরা এ কাজগুলো কখনো করতে পারতাম না।’
‘বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত, বাংলাদেশে কোনো চ্যানেল সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ করা হয়নি, বন্ধ করতেও বলা হয়নি’- উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো ভালো অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারে এবং অনেকেই করে। যে সব বিদেশি চ্যানেল আমাদের আইনকে তোয়াক্কা করে না, আমাদের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে চোখ রাঙ্গায় সেগুলোর পক্ষে ওকালতি করা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি। অবশ্যই সব চ্যানেলের জন্যই আমাদের দ্বার উন্মুক্ত। কিন্তু আইন মেনে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সেই চ্যানেল সম্প্রচার হতে হবে।’
বিদেশি চ্যানেলের পরিবেশক ও কেবল অপারেটরদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘যে সব বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ক্লিন ফিড দেয়, আকাশ ডিটিএইচ এগুলো চালাচ্ছে। অন্যরাও যদি এগুলো না চালায় তাহলে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হবে। সুতরাং শর্ত ভঙ্গের কাজ কেউ করবেন না।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলো পাকিস্তানে, নেপালে, শ্রীলংকায় ক্লিন ফিড পাঠায়। আর ক্লিন ফিড পাঠানোর জন্য যে বড় রকমের বিনিয়োগ ও কারিগরি সুবিধা লাগে এসব কথামালা বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টারই অংশ। এখন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগুলো সহজেই করা সম্ভব এবং সেটি সংশ্লিষ্ট চ্যানেল করতে পারে। এই দায়িত্ব প্রথমত সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের, দ্বিতীয়ত যারা সেই চ্যানেল ডাউলিংক করার অনুমতি নিয়েছেন, তাদের। তারা ব্যবসা করার স্বার্থেই এসব চ্যানেল ডাউনলিংক করার জন্য অনুমতি নিয়েছেন এবং লাইসেন্স দেওয়ার সময় ক্লিন ফিডের শর্তের কথা বলা আছে। কেবল অপারেটরেরাও সেই শর্তের কথা মেনেই তারা লাইসেন্স নিয়েছেন। এমন নয় যে, তারা ছাড়া আর বাংলাদেশে কেউ কেবল অপারেটরের লাইসেন্স চায় না। আমাদের কাছে বহু কেবল অপারেটরের লাইসেন্সের দরখাস্ত জমা পড়েছে। আমরা সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। সুতরাং আইন ভঙ্গ করলে, শর্তভঙ্গ করলে বা বিভ্রান্তি ছড়ালে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সভায় মন্ত্রী বলেন, কেবল অপারেটর সব পক্ষকে নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি ১ নভেম্বর থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে কেবল অপারেটিং সিস্টেমকে তারা ডিজিটালাইজ করবে। আমি আশা করব, এই সময়সীমা সবাই অনুসরণ করার চেষ্টা করবেন। আমি আশা করব, সবাই দেশের স্বার্থ এবং আইন মানাকে তুলে ধরবেন।
তথ্যসচিব মো. মকবুল হোসেন জানান, ‘আমি দেশের সব জেলার ডেপুটি কমিশনারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছি, ক্লিন ফিড আইন বাস্তবায়নে সরকার প্রস্তুত আছে।’
বৈঠকে অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘ক্লিন ফিডের বিষয়টি আমাদের প্রাণের দাবি। ২০০৬ সালে বাস্তবায়নের জন্য আইন করা হলেও সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। সবাইকে চিন্তা করতে হবে দেশের জন্য ভালো কোনটি। সারা পৃথিবীতে ক্লিন ফিডের বিষয়টি রয়েছে। এর ফলে প্রচুর অর্থ দেশ থেকে চলে গেছে। এখন শুধু টেলিভিশন মালিকরা লাভবান হবে না, পুরো দেশ লাভবান হবে।’
এর আগে ডিবিসি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, কেবল অপারেটরদের ওপর নির্দেশ ছিলো যে সব চ্যানেলের ক্লিনফিড আছে, সেগুলো চলবে। কিন্তু সব চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে তারা বিদেশের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে।
অ্যাটকোর সিনিয়র সহসভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, টিআরপির ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছিলো। কোনো অনুমতি ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান টিআরপি করছিলো। তারা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতো। এটি বন্ধ করার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্যও তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।