পাটকল শ্রমিকদের চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন চলছে
নতুন বছরের প্রথম প্রহরে হাসি-আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। নতুন স্বপ্ন আর নতুন ভাবনায় উচ্ছ্বসিত মানুষ। কিন্তু হাসি নেই নরসিংদী ইউএমসি পাটকলের শ্রমিকদের মুখে। বুকভরা কষ্ট, চাপা কান্না, আর্তনাদ, হতাশা আর হাহাকার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অনাহারে দিনানিপাত করছে তারা। কিন্তু তাদের খোঁজ রাখার সময় নেই যেন কারো।
শ্রমিকদের কান্না আর বাঁচার আকুতিতে মিলগেইট এলাকার বাতাস যেন ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে। সংসার চালাতে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে চায়। তাদের দাবি, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া মজুরিসহ ১১ দফা বাস্তবায়ন করা হোক। তারা আজ চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশনে বসেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু করা আমরণ অনশন শুরু করে শ্রমিকরা। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে শ্রমিকরা ১৪ ডিসেম্বর স্থগিত করে কাজে যোগ দেয়। দাবি পূরণে শ্রমিকরা গত ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় আবার তারা আন্দোলনে নামে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাতভর অনশনস্থলে অবস্থান করে তারা। অনশনে অংশ নিয়ে দুই দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তিনজন শ্রমিক। টানা চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন চললেও মিলেনি কোনো আশ্বাস। তাই হতাশ এখানকার শ্রমিকরা।
বয়স্ক পাটকল শ্রমিক মো. সুরুজ মিয়া বলেন, ‘এই মিলে কাজ করে খাই। আজ কতদিন হলো না খেয়ে, অনাহারে অনশনে পড়ে আছি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। কলেজে ভর্তি করিয়েছি। টাকার জন্য পরীক্ষা দেওয়াতে পারি নাই। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে? দয়া করে, এই দেশের সরকারকে একটু বলেন আমাদের দিকে তাকাতে। খুশির দিন আর আমাদের মাঝে নেই। ঘরে চাল নেই। সন্তানদের শীতের কাপড় নেই। পরনের জুতা নেই।’
কাঁদতে কাঁদতে সুরুজ মিয়া আরো বলেন, ‘সন্তানরা আমাকে বলে, দেখ বাবা, আমার সঙ্গের বন্ধুরা কত আনন্দ উল্লাস করছে। তুমি তো আমাদের কাপড়ই দিতে পার না। কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারি না। দয়া করে এই খবরটা প্রধানমন্ত্রীকে জানান। তিনি যেন আমাদের প্রতি সুদৃষ্টি দেন।’
এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুরুজ মিয়া নামের এ বয়োবৃদ্ধ শ্রমিক। তাঁর চোখের জল আর আর্তনাদের কথাশুনে অনশনরত মঞ্চের সবাই কেঁদে ফেলেন।
নাসির নামের আরেক শ্রমিক বলেন, মেয়েটা স্কুলের পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। পকেটে টাকা নাই। তাই কোনো উত্তর দিতে পারি না বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আজকের চতুর্থ দিনের অনশনে সিবিএ, নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের নেতারাসহ মিলের শত শত শ্রমিক অংশ নেয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না বলেও ঘোষণা দেয় শ্রমিকরা।