পি কে হালদারের পালানো ইস্যুতে ইমিগ্রেশনের তথ্য সঠিক নয় : হাইকোর্টকে দুদক
প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিদেশে পালানো ইস্যুতে ইমিগ্রেশনের তথ্য সঠিক নয় বলে হাইকোর্টকে লিখিতভাবে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই ইস্যুতে বেনাপোল সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা ৬৭ পুলিশ সদস্যের তালিকা দাখিল করা হয়েছে।
পি কে হালদারের পালানো নিয়ে দুদকের পক্ষ থেকে লিখিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর পি কে হালদারসহ ২৪ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চিঠি পরদিন ২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় পাঠানো হয়, যা ইমিগ্রেশন গ্রহণ করে। এর আগে ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছিল চিঠি দেরিতে পাঠানোয় পি কে হালদার পালিয়ে যান। এ রিপোর্টের ওপর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে পি কে হালদারের বিদেশ যাত্রা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার চিঠি বিলম্বে পৌঁছানো এবং এই সুযোগে দেশ ছেড়ে তাঁর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গত ১১ মার্চ উষ্মা প্রকাশ করেন উচ্চ আদালত। দুদকের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চিঠি ১৩ ঘণ্টা পর পুলিশের ইমিগ্রেশনে যাওয়ায় প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। প্রযুক্তির এই যুগে একটা চিঠি পাঠাতে এত বিলম্ব হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন আদালত।
এর আগে গত ১ মার্চ হাইকোর্টে ইমিগ্রেশন পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে জানানো হয় যে, প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিদেশে পালানোর ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন পুলিশের গাফিলতি ছিল না। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সড়ক পথে দেশত্যাগ করেছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক এর আগে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর দুদক ইমিগ্রেশন পুলিশকে ডাকযোগে চিঠি দেয় পি কে হালদার যেন দেশত্যাগ না করতে পারেন। ওই চিঠি ইমিগ্রেশন পুলিশ হাতে পৌঁছায় ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায়। তার ৫৩ মিনিট আগেই (২৩ অক্টোবর বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে) পি কে হালদার বেনাপোল দিয়ে দেশত্যাগ করেন। অর্থাৎ পি কে হালদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির চিঠি পাওয়ার আগেই তিনি দেশত্যাগ করেন।
এর আগে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পি কে হালদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কীভাবে দেশত্যাগ করলেন তা জানতে চান হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পি কে হালদার যেদিন দেশত্যাগ করেছিলেন, সেদিন বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরতদের এবং দুদকের দায়িত্বে কে কে ছিলেন তার তালিকা দাখিল করতে বলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি বিভাগে ২০০৮ সাল থেকে কর্মরতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকার বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেপ্তার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করে কানাডায় পাড়ি দেন পি কে হালদার। দেশত্যাগের সময় পি কে হালদার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন।