ফেসবুকে ঝাড়ুদারের সঙ্গে প্রেম, বিয়ের পর কলেজছাত্রীকে ‘হত্যা’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক যুবকের সঙ্গে কলেজছাত্রীর পরিচয়। যুবকটি জানান, তিনি সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের সন্তান। ধীরে ধীরে সম্পর্ক রূপ নেয় প্রেমে। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কলেজছাত্রী জানতে পারেন, তাঁর স্বামী একজন ঝাড়ুদার, আর শ্বশুর ভ্যানচালক। এ নিয়ে হয় ঝগড়া। কলেজছাত্রীকে হত্যা করে স্বামী।
তিন দিন তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবন সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে ওই ‘কলেজছাত্রীর’ বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ছাত্রীর নাম নাজনীন আক্তার। তিনি বগুড়ার সদর উপজেলার সাবগ্রামের আবদুল লতিফের মেয়ে। পড়তেন গাবতলী উপজেলার সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণিতে।
নাজনীনের ভাই আবদুল আহাদ জানান, তাঁর বোনের স্বামী সাকিব হোসেন বগুড়া সেনানিবাসের ঝাড়ুদার। কিন্তু তিনি পরিচয় গোপন করে ও সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের সন্তান দাবি তাঁর বোনের সঙ্গে ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত বছরের ১ অক্টোবর তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর গত ২৪ মে সাকিব তাঁর বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনীনকে নিয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের ভাড়া বাসায় যান। পরে দুদিন বোনের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেননি। ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁর বাবা। এরই সূত্র ধরে সাকিবকে আটক করে পুলিশ।
আটকের পর সাকিব সাংবাদিকেদের জানান, বরিশালে এসে নাজনীন জানতে পারেন তাঁর (সাকিব) বাবা আবদুল করিম হাওলাদার পেশায় ভ্যানচালক। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এ সময় তাঁর কাছে এসব তথ্য গোপন করার কারণ জানতে চান নাজনীন। পরে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাগে নাজনীন তাঁকে ‘ফকিন্নির ছ্যল’ (ভিক্ষুকের ছেলে) বলে গালি দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। পরে বগুড়ায় কর্মস্থলে যোগ দেন সাকিব।
এদিকে সাকিবের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত সোমবার তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুন চরজাহাপুরের বাড়ি এবং আশপাশের এলাকায় স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি চালায় বগুড়া সদর থানার পুলিশ। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে গৌরনদী থানা পুলিশের সহায়তায় ওই উপজেলার বাটাজোরের হরহর গ্রামে সাকিবের বাবা করিম হাওলাদারের ভাড়া বাসাসহ আশপাশের এলাকায়ও তল্লাশি চালায় তারা। পরে ভাড়া বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি ওড়না ও একটি নখের অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়। তবে নাজনীনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। লাশ না পেয়ে বগুড়া সদর থানার পুলিশ গতকাল সাকিবকে নিয়ে ফিরে যায়। তৃতীয় দিনের অভিযানে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউপি ভবন সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে বস্তাবন্দি একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের শরীরে থাকা পোশাক দেখে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, এটি নাজনীনের মরদেহ।
গৌরনদী থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, বাটাজোর ইউপি ভবন সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, সেটা নাজনীনের লাশ। তাঁর মা-বাবাকে বরিশালে আসতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।