বরিশাল মেডিকেল কলেজে অভিযানে গিয়ে হুমকির মুখে দুদক টিম
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে অভিযান চালাতে গিয়ে কলেজ অধ্যক্ষসহ অন্যদের বাধার মুখে পড়েছে দুদক টিম। এসময় দুপক্ষের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। হাসপাতাল ও কলেজে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, হাসপাতালের চেয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। এসময় দুদক টিমকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন কলেজ অধ্যক্ষ।
আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া নয়টা থেকে সোয়া দশটা পর্যন্ত দুদক বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজকুমার সাহার নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি টিম এই অভিযান চালান।
অভিযানে অভিযোগের সত্যতাও পায় দুদক। জানা গেছে, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রতিদিন ৩-৪শ রোগী দেখেন। এমনকি সরকার নির্ধারিত সকাল ৮টার অফিসেও তারা আসেন না। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার সোয়া নয়টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহিনের কক্ষে গেলে তাকে পাননি দুদক টিম। এমনকি অফিসের একজন পিয়নও উপস্থিত ছিলেন না। দুদকের টিম আসার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে কার্যালয়ে আসেন কলেজ অধ্যক্ষ। দুদক টিম কলেজ অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসকদের এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা দেখতে চান। তা দিতে অস্বীকার করেন কলেজ অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন। এ নিয়ে দুদকের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অভিযানকারী টিমের ছবি তুলে রাখার হুমকি দিচ্ছেন মনিরুজ্জামান শাহিন এবং কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। এসময়ে দুদক টিম তাদের পরিচয় দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলে নিজেদের অভিহিত করেন। তখন কলেজ অধ্যক্ষ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আপনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর আমি (অধ্যক্ষ) কি উড়ে এসেছি নাকি!
এর কিছুক্ষণ পরে কলেজের অন্যান্য চিকিৎসক আসতে শুরু করেন। সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসকরা এসে অধ্যক্ষের কক্ষে বায়েমেট্রিক হাজিরা দিতে শুরু করেন।
দুদক টিম চলে যাওয়ার পরে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের টিম আমার কক্ষে এসে আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। তারা আমাকে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা বলে অভিহিত করেন। আমার কক্ষে ঢুকে যে আচরণ করেছেন, তা তারা করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, আমি জেনেছি তাদের কেউ একজন ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এজন্য তারা এসেছেন চিকিৎসকরা কখন আসেন, তা দেখার জন্য। দুদক টিম আমার কাছে বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা চান। আমি স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের (ডিজি) সাথে আলাপ করেছি। তিনি বলেছেন, দুদক টিম যদি আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে না আসে, তাহলে সে হঠাৎ করে এসে কাগজ চাইতে পারে না। এগুলো দেইনি দেখে আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন।
অধ্যক্ষ বলেন, আমি বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বরিশালের সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে সকল চিকিৎসককে অবহিত করেছি। আমরা দুপুর আড়াইটার দিকে বসে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিব।
মনিরুজ্জামান শাহিন চিকিৎসকদের দেরিতে অফিসে আসার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তা ঠিক আছে। আবার অনেক সময়ে চিকিৎসকরা দেরিতে এসে দায়িত্ব পালন করে পাঁচটার সময়েও যান। তা কিন্তু কেউ বলেন না। তবে ডাক্তাররা অতিরিক্ত দেরিতে এলে তা কেউ মেনে নিবে না।
সরকারি দায়িত্ব অবহেলা করে ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসকরা সময় দেন বেশি অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ব্যক্তিগত চেম্বার করা যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা আছে বলে জানা নেই। যদি থাকে তাহলে চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বার করবেন না। তাছাড়া কতজন রোগী দেখতে পারবেন, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই।