বাহরাইনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সুজনের বাড়িতে চলছে শোক
বাহরাইনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মো. সুজন মাতবরের (৩০) বাড়িতে চলছে শোক। সুজন শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার দক্ষিণ ডুবলদিয়া কাজী কান্দী গ্রামের মৃত মজিবর মাদবরের ছেলে।
গতকাল শনিবার বাহরাইনের স্থানীয় সময় ভোর ৩টার দিকে জাল্লাক বিচ থেকে ঈদে ঘোরাঘুরি শেষে রাজধানী মানামায় ফিরছিলেন সুজন ও তাঁর বন্ধুরা। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান সুজন। মৃত্যুর খবর শোনার পর পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত সুজনেরা দুই ভাই, তিন বোন। সংসারের দায়িত্বভার তাঁর কাঁধে ছিল। সুজন বাহরাইনের মানামা শহরে থাকতেন। ১৪ বছর আগে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন বাহরাইনে। আগামী কোরবানির ঈদে দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিল সুজনের।
মৃত্যুর খবর শোনার পর সুজনের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসেছে সমবেদনা জানাতে। বারবারই মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন সুজনের মা রিনা বেগম। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
আজ রোববার সুজনদের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ দুবলদিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, খাটের ওপর গড়িয়ে মূর্চ্ছা যাচ্ছেন নিহত মো. সুজন মাদবরের মা রিনা আক্তার। আর বলছিলেন, ‘কোরবানির ঈদে দেশে আসার কথা ছিল আমার বাছার। কইছিল মা এইবার দেশে আইশা বিয়ে করব। আমার ছেলে এসে আমাকে মা বলে ডাকবে। সারাদিন আমার সাথে ফোনে কথা বলে দুই দিন ধরে ওর কাজের চাপ, তাই কথা বলতে পারছে না। আমার মানিক অহন লাশ হয়ে ফিরব। আমি অহন কেমনে বাঁচুম। আমার বাবাতো আর আমারে মা কইয়া ডাকব না!’
সুজন মাদবরের ছোট ভাই মো. সজিব মিয়া বলেন, ‘অভিভাবক শূন্য হয়ে গেলাম আমরা। বাবা জীবিত থাকার সময় থেকে ভাই সংসার চালাতেন। তাঁর ওপরই পুরো পরিবারই নির্ভরশীল ছিল। তিন বছর আগে দেশে আসছিলেন, যখন আমার বাবা মারা যান। আজ সকালে ভাইয়ার সাথে থাকা এক ভাই ফোন দিয়ে জানান যে ভাইয়া দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এবার দেশে কোরবানির ঈদ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন আর আসা হবে না। লাশ হয়ে দেশে আসবে আমার ভাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন আমার ভাইয়ের লাশটি যেন দ্রুত দেশে আনতে পারি, সেই ব্যবস্থা করার। একটাই দাবি যাতে করে আমার ভাইরে দেশের মাটিতে কবর দিতে পারি।’
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘লাশটি দেশে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন তা আমরা গ্রহণ করব।’