বিদেশের ‘বেগমপাড়া’য় বিনিয়োগকারীদের তথ্য চেয়েছে দুদক
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশি নাগরিকের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বাড়ি ও বড় ধরনের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ রয়েছে, তাঁদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশের বহু রাজনীতিবিদ,সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার করে কানাডা ও মালয়েশিয়ার ‘বেগমপাড়া’ নামে পরিচিতি পাওয়া আবাসিক এলাকায় দামি বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন—এ অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গত বৃহস্পতিবার এ চিঠি দিয়েছে।
চিঠির বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এনটিভি অনলাইনকে জানান, বহু বাংলাদেশি নাগরিক দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মাধ্যমে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশগুলোতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন। কারো কারো পরিবারের সদস্যদের সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অবৈধভাবে বিপুল অর্থ পাচার করে তাঁরা এগুলো গড়ে তুলেছেন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ছাড়া এসব দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দুদকের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। এ কারণেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
কতজনের তালিকা দিয়েছেন, জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিষয়গুলো উল্লেখ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু নথিও দেওয়া হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে তালিকার বিষয়টি বলা যাচ্ছে না। তবে খুব দ্রুত তাদের বিষয়ে তথ্য দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুদকের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কানাডার ‘বেগমপাড়া’য় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের আয়েশি ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও বাড়ি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই আলোচনায় আসে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের হাব হিসেবে পরিচিত কানাডার বেগমপাড়া।
গত ১৪ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে ‘বেগমপাড়া’ বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন দুর্নীতি দমন কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। বৈঠকে উঠে আসে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারকারীদের বেশির ভাগই সরকারি কর্মকর্তা।
ওই বৈঠক শেষে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সর্বশেষ ৮০ জন বড় আমলা, যাঁরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তাঁদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের চেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন সরকারি চাকুরেরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে,কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে,যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়,সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাঁদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এ ছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে পাচারে শুধু কানাডা নয়,মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা।’