বেরোবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১১০ অভিযোগের তদন্তে ক্যাম্পাসে ইউজিসির টিম
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ১১০টি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যেরা।
তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দর নেতৃত্বে কমিটির সদস্য সচিব সিনিয়র সহকারী সচিব জামাল উদ্দিন এবং ইউজিসির সদস্য ও তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের আজ রোববার বেলা পৌনে ১২টায় ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছান।
তদন্ত শুরুর আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ জানান, শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১১০টি অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তকাজ শুরু হচ্ছে।
এর আগে ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক বরাবর পাঠানো হয়। সেইসঙ্গে এই চিঠির অনুলিপি উপাচার্যের একান্ত সচিবকেও দেওয়া হয়। এতে ১৪ মার্চ তদন্তকাজ হবে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই চিঠিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের দালিলিক প্রমাণসহ সাক্ষীদের উপস্থিত থাকার জন্য তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে সাত শিক্ষককে অনুরোধ জানানো হয়।
বেরোবি শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ৪৫টি অভিযোগ পাঠায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি উপাচার্য হয়েও অনুপস্থিত থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছেমত পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে একাডেমিক প্রশাসনিক পদ দখল ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এসব অভিযোগ লিখিত আকারে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর পাঠান।
অভিযোগকারী সাত শিক্ষক হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম তারিকুল ইসলাম, ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল কবির, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র রায়, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ এবং অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন।
সম্প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০ তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পায় ইউজিসির আরেকটি সরেজমিন তদন্ত কমিটি। ওই কমিটির প্রতিবেদনে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে ৪৫টি অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বরাবর পেশ করেছি। তা তদন্ত করতে রোববার ইউজিসির একটি দল ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছেছেন। আমরা তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ প্রমাণ কাগজপত্র দেব।’
এদিকে, গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ নিয়ে গঠিত অধিকার সুরক্ষা পরিষদ নামে একটি সংগঠন উপাচার্যের দুর্নীতির ১১১টি অভিযোগের ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ড. চন্দ বলেছেন, ‘সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের মধ্যে যাঁরা উপস্থিত রয়েছেন তাঁদেরও বক্তব্য নেওয়া হবে।’