ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ দিনেও চলছে আদালত বর্জন কর্মসূচি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাবি আদায় না হওয়ায় টানা চতুর্থ দিনের মতো আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করেছেন আইনজীবীরা। আজ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকাল থেকে বর্ধিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা আইনজীবী সমিতি আরও তিন দিনের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁদের আদালত বর্জন কর্মসূচি চলবে।
এর আগে দুই বিচারকসহ নাজিরের অপসারণ দাবিতে গত বৃহস্পতিবার, রোববার ও সোমবার প্রথম দফায় আদালত বর্জন করে কর্মসূচি পালন করেন তারা। নতুন কর্মসূচির আলোকে আজ সকাল থেকে আদালতের কোনো এজলাসে যাননি তাঁরা। আইনজীবীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় মামলার শুনানি, হাজিরাসহ কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। এতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার প্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। কেবল নতুন তারিখ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে আদালত বর্জন কর্মসূচির সময় আরও তিন দিন বাড়ানোর ফলে বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। টানা আদালত বর্জন কর্মসূচির কারণে বিচারপ্রাথীরা দূর-দূরান্ত থেকে এলেও আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় তাঁদের ফিরে যেতে হয়েছে। আবার অনেকেই আসামিদের জামিন করাতে না পেরে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
ভূক্তভোগী বিচারপ্রার্থীরা জানান, দূর-দূরান্ত থেকে টাকা খরচ করে আদালতে বিচারিক কার্যক্রম না থাকায় তারা হতাশ।
আদালতে আসা বিচার প্রার্থী শহরের মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমার ভাই পারিবারিক ঝগড়ার মামলায় কারাগারে রয়েছে। তার জামিন করাতে এসে দেখি আদালতে বিচারিক কাজ নেই। আমার ভাই অনর্থক জেল খাটছে। আদালতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা উচিত।’
নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের ভাদুঘর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ছেলে প্রায় দুই সপ্তাহ জেলে রয়েছে। তার জামিন করাতে আদালতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি আদালতে কার্যক্রম নেই। এখন বিনা বিচারে আমার ছেলে জেলে রয়েছে।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণ এবং শ্লোগান দেওয়ার ঘটনায় ওই বারের ২১ আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৩ জানুয়ারি তাঁদের হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এর আগেও হাইকোর্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে হাজির থাকার আদেশ দেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
নতুন করে আরও ২১ জন আইনজীবীকে হাইকোর্টে তলবের বিষয়ে জানতে চাইলে মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘উচ্চ আদালতে দেওয়া অভিযোগে ৫ ও ৮ জানুয়ারি তারিখে বিচারকের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেওয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।’
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সাধারণ মানুষের যে দুর্ভোগ ও কষ্ট, তাদের দায়ভার আইনজীবীদের। তাঁরা (আইনজীবীরা) কেন কোর্টে আসেনা এটা তাঁরাই বলতে পারবেন। তাঁরা কোর্টে না আসাতে সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেন আবারও তাঁদের কর্মসূচির সময় বাড়িয়েছে তা আমাদের জানা নেই। বিচারকরা এজলাসে নিয়মিত এলেও আইনজীবীরা আদালতে না আসায় আদালতের কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বিচার প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’