ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার, বালিশের নিচে ‘সুইসাইড নোট’
রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সানজনা মোসাদ্দিকা নামের ওই শিক্ষার্থী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান এবং উপপরিদর্শক (এসআই) ও এ ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা রেজিয়া খাতুন আজ রোববার সকালে এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বহুতল ভবনটির সাত তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ওই ছাত্রী। তাঁর কক্ষে যে বিছানা রয়েছে, তার বালিশের নিচ থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সুইসাইড নোটে এ মৃত্যুর জন্য ওই শিক্ষার্থীর বাবা শাহিন ইসলামকে দায়ী করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই শাহিন পলাতক রয়েছেন। এ ব্যাপারে ওসি মামুনুর বলেন, ‘যাচাই-বাছাই ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি মামুনুর রহমান বলেন, ‘জেনেছি যে, শনিবার দুপুরের দিকে দক্ষিণখানের একটি বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন সানজনা নামের ওই শিক্ষার্থী। এতে গুরুতর আহত হলে তাঁকে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নিয়ে যান পরিবারের সদস্যেরা। পরে চিকিৎসকেরা সানজনাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর সন্ধ্যায় পুলিশ হাসপাতাল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।’
ওসি মামুনুর বলেন, ‘পরিবার জানিয়েছে, সানজনার বাবা গাড়ি ভাড়া দেওয়ার (রেন্ট–এ কার) ব্যবসা করেন। পরিবারের ভরণপোষণ দিতে হিমশিম খাওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো তাঁর। মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচও চালাতে পারছিলেন না তিনি। কোনো কারণে বাবার প্রতি রাগ–ক্ষোভ থেকে সানজনা আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘তবে, নিহত সানজনার বন্ধু-বান্ধব ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, সানজনার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন—এমন খবর জানার পর ঝামেলা তৈরি হয়। বন্ধুদের দাবি, সানজনাকে হত্যা করা হতে পারে। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। কোনটা সত্য, তা বের হয়ে আসবে।’
সুইসাইড নোটে কী লেখা ছিল জানতে চাইলে এসআই রেজিয়া খাতুন বলেন, “ওই সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ী। একটা ঘরে পশুর সাথে থাকা যায়, কিন্তু অমানুষের সাথে না। একজন অত্যাচারী এবং রেপিস্ট যে কাজের মেয়েকেও ছাড়ে নাই। আমি তার করুণ ভাগ্যের সূচনা।’”
রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘সানজনার বাবার নাম শাহিন ইসলাম। তাঁকে আসামি করে শনিবার দিবাগত রাতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী উম্মে সালমা মনি। যদিও তিনি শুরুতে অভিযোগ করতে চাননি। তবে, মেয়ের খালা উম্মে কুলসুম মামলা করতে চান। একপর্যায়ে সালমা মামলা করতে রাজি হন।’
ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে, এমন প্রশ্নে রেজিয়া খাতুন দাবি করেন, ‘প্রায় এক বছর আগে শাহিন ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শুনেছি নতুন স্ত্রী ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বেশ কিছুদিন আগে এ খবর মেয়ে জেনে যায়। এরপর থেকেই মূলত তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। মেয়েকে মারধর করা হতো নিয়মিত। যদিও শাহিন ইসলামের স্বভাব-চরিত্র নিয়ে মাঝেমধ্যে তাদের পরিবারে কলহ চলতো। সর্বশেষ কয়েকদিন ধরে সানজনা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার খরচের জন্য এক লাখ ২৪ হাজার টাকা চাচ্ছিলেন। গতকালও এ টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু, শাহিন ইসলাম টাকা না দিয়ে মারধর করেন। এরপরই এ ঘটনা ঘটেছে।’
এসআই রেজিয়া খাতুন আরও বলেন, ‘মেয়ের খালা উম্মে কুলসুম আমাকে বলেছেন, শাহিনের স্বভাব ভালো ছিল না। বাসায় কাজের মেয়ে রাখতেও ভয় পেতেন তাঁর স্ত্রী। এ ঘটনার পর থেকে শাহিন পলাতক। তাঁকে ধরার চেষ্টা করছি আমরা।’