ভালো নেই কর্মহীন ভোলার কামাররা
সাধারণত কোরবানির সময়টাতে দম ফেলার সুযোগ থাকে না কামারদের। লোহায় হাতুরির আঘাত আর ঝনঝন শব্দে মুখর হয়ে ওঠে পুরো কামারপাড়া। এমন মুহূর্তে গ্রাহকের দা, ছুরি, বটি মেরামতে ব্যস্ত হয়ে ওঠার কথা কামারদের। সেখানে এক রকম অলস সময় কাটাচ্ছে ভোলার কামাররা। কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে কোনোরকম জীবন কাটছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।
সারা দেশে চলছে লকডাউন। তা থেকে বাদ নেই দ্বীপ জেলা ভোলা। ফলে শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবুও কোনো রকম খুলেছে শহর থেকে দূরের বাজারের কিছু দোকান। কাঁচাবাজারের সঙ্গে দুই-চারটি কামারের দোকানও খুলছে। এমন একটি বাজার রয়েছে সদর উপজেলার ইলিশা এলাকায়। এ হাটেও দুএকটি কামারের দোকান খুলেছে। কিন্তু মূল শহর থেকে এ বাজার বাইরে বলে এখানে নেই তেমন ক্রেতা। কিছু দা, ছুরি, বটির পসরা সাজিয়ে বসলেও বিক্রি হচ্ছে না। এখানে দুই-একজন গ্রাহক আসেন পুরানো দা ছুরি ধার দিতে।
ইলিশা বাসিন্দা তপন কর্মকার এ বাজারেরই একজন দা ছুরির দোকানি। পূর্বপুরুষ সবাই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তিনিও এ কাজ করছেন। সারা দিনে কিছুই বিক্রি করতে পারেননি তিনি। তপন কর্মকার জানান, কোরবানি চলে এসেছে, তবুও কোনো ক্রেতা নেই। সারা দেশে লকডাউন চলায় বাজারে লোকজন নেই। দূর থেকেও ক্রেতারা আসছে না। খেয়ে না খেয়ে কাটছে তাঁর জীবন।
শুধু তপন কর্মকার নয়, রিপন ভক্ত ও মো. খলিল মিয়ার একই অবস্থা। সবকিছু সাজিয়ে বসলেও ক্রেতা না থাকায় হতাশ তাঁরা। এভাবে চললে না খেয়ে মরতে হবে বলে ক্ষোভ জানালেন তাঁরা।
এদিকে, ভোলা শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার এলাকা কামার শিল্পের জন্য পরিচিত একটি স্থান। লকডাউন থাকায় সেখানেও সব দোকান বন্ধ রয়েছে। এখানে ১৫ থেকে ১৬টি কামারের দোকান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় বিপাকে পরেছে সাধারণ মানুষ। পশু জবাই করার জন্য দা, বটি, চাকু ও চাপাতি ক্রয় বা মেরামত করতে পারছেন না কেউ।
এমন একজন ক্রেতা মো. সোলায়মান বলেন, ‘আমরা কোরবানি দেব। গত বছর চাপাতি, চাকু কিনেছিলাম। এ বছর একটু ধার দেওয়াতে পারছি না কামারদের দোকান বন্ধ থাকার কারণে। এভাবে চলতে থাকলে কোরবানি দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তাই কোরবানির সঙ্গে জড়িত পেশাজীবীদের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’