ভোলায় ৬২০ বিসিএফ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে : বাপেক্স
নর্থ-২ কূপসহ ভোলায় ৬২০ বিসিএফ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে বলে ধারণা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। দ্রুত অনুসন্ধানের মাধ্যমে গ্যাসের সন্ধান করতে হবে, না পারলে আমাদের যে ক্রাইসিস—তা মিটানো কঠিন হবে বলে ধারণা বাপেক্স কর্মকর্তাদের। অপরদিকে নতুন করে গ্যাস পাওয়ার খবরে আনন্দিত গ্রামবাসী। একইসঙ্গে বুকভরা আশা নিয়ে নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে পোষণ করেছেন অনেকেই।
গতকাল সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বাপেক্স ভোলা নর্থ-২ কূপে নতুন করে পাওয়ার খবর দেয়। বিকেলে আগুন প্রজ্বলন করে আনন্দ প্রকাশ করে সফলতা আসায়। একইসঙ্গে গ্রামবাসী উৎফুল্ল আর আনন্দিত হয়ে ওঠে এমন সফলতায়।
দক্ষিণ চরপাতা গ্রামের মো. আজিজুল হক বলেন, ‘আমার ৭২ শতাংশ জমি রয়েছে এই গ্যাস কূপে। আমার খুবই আনন্দ লাগছে গ্যাস পাওয়ার খবরে। তবে আমরা যদি গ্যাস ব্যবহারের জন্য পাই এবং আমাদের সন্তানরা চাকরি পায় শিল্প কারখানায়, তখন আনন্দটা আরও বেশি হবে।’
একই কথা বলেন মো. গোলাম কিবরিয়া ও মো. সালাউদ্দিন। তাদের বক্তব্য, এ গ্যাসকে কেন্দ্র করে এলাকায় যদি শিল্প কারখানা গড়ে উঠে—সেটাই হবে সফলতার আনন্দ। একই সাথে ভোলার নদী ভাঙন প্রতিরোধসহ বেকার সমস্যার সমাধান হবে—এমনটাই দাবি গ্রামের হাজারো মানুষের। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ভোলা নর্থ-২-এর কূপ খনন শুরু হয়। তিন হাজার ৪২৮ মিটার গভীরতায় সফলভাবে কূপ খনন শেষ হয় ১৭ জানুয়ারি। যে কারণে গতকাল সোমবার নতুন এই কূপে গ্যাস পাওয়া যায়।
বাপেক্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ কূপ থেকে প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ হবে ২০ থেকে ২২ মিলিয়ন ঘনফুট।
দক্ষিণ চরপাতা গ্রামে আজ মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, নতুন এই কূপের প্রজ্বলিত আগুনের শিখা দেখতে মানুষ ভিড় করছে। তাদের সবার চোখেমুখে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। স্থানীয় লোকজন মনে করছে, নতুন এই গ্যাসকূপের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে। গ্যাসকূপকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় শিল্প ও কলকারখানা গড়ে উঠলে স্থানীয় লোকজনের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। প্রায় তিন হাজার ৪০০ মিটার পর্যন্ত খনন করার পর গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরপাতা গ্রামের মো. কামাল। একজন ব্যবসায়ী। তার এলাকায় গ্যাস পাওয়ার খবরে ভোলা শহর থেকে দ্রুত এলাকায় চলে আসে এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আগুন প্রজ্বালন দেখেন। তিনি এলাকার উন্নয়ন হবে এই আশায় বুক বেঁধে আছেন।
ভোলায় এখন পর্যন্ত আটটি কূপে গ্যাস পাওয়া গেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া গ্রামে প্রথমবারের মতো শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। এরপর বাপেক্স সেখানে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি কূপ খনন করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের দিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গ্যাসের সন্ধানে ভূতাত্ত্বিক জরিপ চালানো হয়। তখন তিনটি স্থানে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় বলে দাবি বাপেক্স কর্মকর্তাদের। এদিকে ভোলা নর্থ-২ কূপটি খননের জন্য বাপেক্স বার্ষিক নগদ লগ্নির ভিত্তিতে চার থেকে পাঁচ মাস আগে ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করে। গত ৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে খননের কাজ শুরু করে। প্রায় তিন হাজার ৪০০ মিটার পর্যন্ত খনন করার পর সেখানে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। চলতি বছরের আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি কূপটি বাপেক্সের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাপেক্স। এ জরিপ কাজে ব্যয় হবে ২৬৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে আগামী অর্থবছরের অক্টোবর থেকে সিসমেক সার্ভের (ভূতাত্ত্বিক জরিপ) কাজ শুরু হবে। এতে জ্বালানি খাতে নতুন করে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন আরও অনুসন্ধান কাজে গুরুত্ব দিব। যত বেশি অনুসন্ধান হবে তত বেশিই আমাদের জন্য ভালো হবে। ভোলায় ৬২০ বিসিএফ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে বলে ধারণা করছি। দ্রুত অনুসন্ধানের মাধ্যমে গ্যাসের সন্ধান করতে হবে। না পারলে আমাদের ক্রাইসিস মিটানো কঠিন হবে।’