মুরগির কেজিতে ২০ টাকা লাভ চান খামারিরা, ডিমে ৬০ পয়সা
সরকারিভাবে সঠিক উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে প্রতিটি ডিমে ৬০ থেকে ৮০ পয়সা এবং মুরগির কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা লাভ রেখে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে রাজশাহী পোলট্রি ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ। আজ শনিবার দুপুরে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানানো হয়। এ সময় খামারিরা তাদের ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী পোলট্রি ফার্মার ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক হাসিবুল আলম শাওন, পোলট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন জানান, বর্তমানে সাদা ডিম উৎপাদনে তাদের খরচ পড়ছে নয় টাকা ৫০ পয়সা এবং লাল ডিমের ক্ষেত্রে খরচ পড়ছে ১০ টাকা। একজন খামারি বর্তমানে আড়ত থেকে সাদা ডিমের দাম পাচ্ছে সাত টাকা ৬০ পয়সা এবং লাল ডিমে পাচ্ছে আট টাকা। এতে প্রতিটি সাদা ডিমে এক টাকা ৯০ পয়সা এবং লাল ডিমে দুই টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে খামারিদের।
এদিকে, বর্তমানে প্রতি কেজি সোনালি জাতের মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, হাইব্রিড সোনালির কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা।
এ তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেশিরভাগ সময় খামারিরা ডিম ও মুরগিতে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সে কারণে লোকসানের ভার বইতে না পেরে একের পর এক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে করোনার সময় থেকে এ পর্যন্ত জেলার প্রায় ৪৫ হাজার খামারের মধ্যে ২৫ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে খারিরারা বলেন, কিছুদিন আগে যখন ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল, সে সময় তারা গড়ে প্রতিটি ডিমের দাম পেয়েছে ১১ টাকা। সে সময় তারা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছিল। কিন্তু প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে ডিম ও মুরগির দাম কমে যায়। নিজ নিজ পর্যায়ে দেশের প্রতিটি মানুষই ভোক্তা, এই তথ্য দিয়ে খামারিরা বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের কাম্য নয়। খামারিরা কোনো অবস্থাতেই অধিক লাভ প্রত্যাশা করেন না। তারা চান, সঠিকভাবে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে প্রতিটি ডিমে খামারিদের ৬০ থেকে ৮০ পয়সা এবং প্রতিকেজি মুরগিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা লাভ নির্ধারণ করে দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মুরগির খাদ্য ও ওষুধসহ একদিন বয়সী বাচ্চার দর প্রতিদিন অস্বাভাবিক হারে উঠা-নামা করে। ১৫ টাকা দামের একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম কোনো কারণ ছাড়াই রাতের ব্যবধানে সেই বাচ্চা কখনও ৩০ টাকা আবার কখনও ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে খামারিদের কিনতে হয়। অথচ সরকারি কোনো দপ্তরেরই নজরদারি নেই বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। একইভাবে ২০০৮ সালে ৫০ কেজি ওজনের যে মুরগি খাদ্যের দাম ছিল এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, বর্তমানে সেই খাদ্যের দাম হয়েছে দুই হাজার ৮৫০ টাকা। একইভাবে ওষুধ, ভ্যাকসিনের দাম বেড়েছে, বিদ্যুতের বিল বেড়েছে এবং কর্মচারীদের বেতনসহ পোলট্রি সেক্টরের সব সামগ্রীর খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। শুধু দাম বাড়েনি ডিমের। খামারিরা বলেন, ২০০৮ সালে প্রতিটি ডিম তারা বিক্রি করেছেন সাত টাকা থেকে আট টাকা, ১৪ বছর পরও সেই একই দামে এখনও ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে অব্যাহত লোকসানে টিকতে না পেরে রাজশাহী জেলায় এরই মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
সরকার এখনই এই সেক্টরে নজর না দিলে অবশিষ্ট খামারগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের পোলট্রিশিল্প রুগণ হয়ে বন্ধ হয়ে গেলে বেশি দামে ডিম ও মুরগি বিদেশ থেকে আমাদের আমদানি করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে খামারিরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—সরকারিভাবে সঠিক উৎপাদন খরচ নির্ধারণের মাধ্যমে ডিম ও মাংসজাত মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া, স্বল্পমূল্যে মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন, মেডিসিন ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া, পোলট্রি খামারগুলোতে স্থাপিত বৈদ্যুতিক মিটারগুলোকে বাণিজ্যিকের পরিবর্তে কৃষিভিত্তিক মিটারে রূপান্তর করা, সরকারি ও সেরকারি ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ও সহজ পদ্ধতিতে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনর্বাসনে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে রাজশাহী পোলট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, রাজশাহী পোলট্রি ফার্মার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, ভেটেরেনারি এক্সিকিউটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ডা. মো. শফিক ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সানাউল হক, পোলট্রি ব্যবসায়ী এনামুল হক ও এস এম আহসানুল হাবিব শাহিন উপস্থিত ছিলেন।