যে কারণে বান্দরবানে জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প অনিশ্চিত!
বান্দরবানে সমন্বয়হীনতা ও ভূমি সংকটে জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছা না থাকায় মসজিদের জন্য জমি নির্ধারণের কাজটি থমকে গেছে বলেও অভিযোগ সচেতন মহলের। তবে স্থানীয় কজন মসজিদ কমপ্লেক্সের জন্য জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক অনীহায় গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
প্রশাসন ও ইসলামি ফাউন্ডেশন সূত্র মতে, ইসলামি মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল এটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পষিদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ছিল নয় হাজার ৬২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সেখান থেকে প্রথম দফায় কমে দাঁড়িয়েছিল আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এখন আবার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে নয় হাজার ৫৫৯ কোটি ৬২ লাখ টাকায় দাঁড়াচ্ছে। প্রকল্পটি মূল মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বান্দরবান জেলায় ৪৩ শতাংশ জমির উপর ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা মডেল মসজিদ নির্মাণের কথা রয়েছে। মসজিদে একই সঙ্গে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ চলবে। নারীদের আলাদা নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। যেখানে থাকবে ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামি গবেষণা ও দাওয়া কার্যক্রম, হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম, পর্যটকদের আবাসন, হজযাত্রীদের নিবন্ধন প্রভৃতি।
হলুদিয়া ন্যাচারাল পার্কের মালিক অধ্যাপক মো. ওসমান গনি বলেন, সুয়ালকের হলুদিয়ায় প্রধান সড়কের পাশের এলাকায় জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা আমি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু জায়গা সংকটে জেলা মডেল মসজিদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হওয়াটা দুঃখজনক।
ভূমি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাছির বলেন, সুয়ালকের রেইছা লম্বা রাস্তায় আমাদের রেকর্ডীয় জমি রয়েছে। পাশের সরকারি খাস জমিসহ আমাদের জায়গায় জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। আমরা মসজিদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেখানে রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল নির্মাণ হবে বলে শোনেছি। মসজিদের জন্য যেকোনো সময় জায়গাটি দিতে রাজি আছি।
ইসলামি ফাউন্ডেশন বান্দরবানের উপপরিচালক জাকির হোসেন বলেন, জেলা মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩ শতাংশ জমির প্রয়োজন। কিন্তু বান্দরবান জেলায় জমি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি নির্ধারণের জন্য এডিসিকে সভাপতি করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের পাশে মেঘলা এলাকায় একটা জমি পছন্দও করেছে কমিটি। কিন্তু নির্ধারিত হয়নি এখনো।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, সমন্বয়হীনতায় জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পটি এগোচ্ছে না। কয়েকজন জায়গা দিতে চাচ্ছেন, কিন্তু সেটি গ্রহণ করা হচ্ছে না। রেইছা লম্বা রাস্তায় একটি জায়গা নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল করা হবে বলে সেটি বাতিল করা হয়। দ্বিতীয় আরেকটি জায়গা দেখা হয়, কিন্তু সেটি পাহাড় হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা সম্মত হননি। বর্তমানে মেঘলায় জেলা পরিষদের একটি জায়গা পছন্দ করেছে কমিটি। কিন্তু সেটি নিশ্চিত করতে জেলা পরিষদে আবেদন করতে হবে। প্রশাসন-জেলা পরিষদ সম্মত হলে সেখানেই জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ হতে পারে। কিন্তু সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবান প্রধান সড়কের পাশে হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দৃশ্যমান বড় স্থাপনা রয়েছে। আকর্ষণীয় জেলা মডেল মসজিদটিও প্রধান সড়কের কোথাও নির্মাণ করা হলে সম্প্রীতির বান্দরবান আরও আলোকিত হবে। এটি পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের ইচ্ছে। আমরাও সেটি চাচ্ছি।
এ বিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য কোনো জায়গা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। বিভিন্ন স্থানে জায়গা দেখা হচ্ছে, কিন্তু পছন্দমতো জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে জায়গা দিতে চাচ্ছেন। জায়গা দিতে চাইলেই তো হবে না, মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গাটি উপযুক্ত হতে হবে। পাহাড় কাটতে হবে এবং জলাশয় ভরাট করতে হবে—এমন জায়গা দিলে তো হবে না। জমি সমস্যা ছাড়া অন্যকোনো সমস্যা নেই।