রাজশাহীতে কৃষক হত্যায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কাঠালবাড়িয়া গ্রামে কৃষক নুরুন্নবী হত্যা মামলায় নারীসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এছাড়া অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর এক আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুন্যাল রাজশাহী ও বিশেষ দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক আকবর আলী শেখ এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন দুর্গাপুর উপজেলার কাঠালবাড়িয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন ও দেরাজ উদ্দিনের স্ত্রী ফুলজান বিবি।
জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুন্যালের কৌঁসুলি (পিপি) আসাদুজ্জামান মিঠু জানান, মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর মধ্যে মফিজ উদ্দিন ও ফুলজান বিবির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার অপর আসামি ফুলজানের স্বামী দেরাজ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় তাকে খালাস দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, দেরাজ মিস্ত্রির স্ত্রী ফুলজানের সঙ্গে পরকীয়া ছিল মফিজ উদ্দিনের। একদিন সেই বাড়িতে নূরন্নবীকে দেখতে পান মফিজ উদ্দিন। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নুরুন্নবীকে হত্যার হুমকি দেন মফিজ। এর সূত্র ধরে নুরন্নবীকে হত্যার পরিকল্পনা করে ফুলজান বিবি ও মফিজ উদ্দিন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নুরুন্নবীকে বাড়িতে ডাকেন ফুলজান। আর আগে থেকেই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন মফিজ উদ্দিন। ফুলজানের ডাকে সাড়া দিয়ে নুরুন্নবী তার বাড়িতে গেলে মফিজের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ফুলজান বিবি একটি ধারালো হাসুয়া মফিজের হাতে তুলে দিয়ে তাকে হত্যা করতে বলে। এতে মফিজ নুরুন্নবীর গলায় আঘাত করে মাথা আলাদা করে দেয়।
এরপর মফিজ ও ফুলজান বিবি নিহত নুরুন্নবীর লাশ একটি বস্তায় ভরে বিলে ফেলে আসেন। আর মাথাটি আরও দূরে ফেলে দিয়ে আসেন। মফিজ ও ফুলজান বিবির ধারণা ছিল, মানুষ যেন মনে করে নুরুন্নবীকে গলা কাটা হত্যা করার পর খুনিরা কাটা মাথা নিয়ে গেছে। তবে যে রাস্তা দিয়ে হত্যার পর মৃত নুরুন্নবীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই রাস্তায় রক্ত পড়ে ছিল। এই রক্ত ফুলজান বিবির বাড়ি থেকে লাশ ফেলে আসা জমি পর্যন্ত দেখা যায়।
২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুর্গাপুরের কাঠালবাড়িয়া নিজ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন নুরুন্নবী। একদিন পরে সকালে দুর্গাপুরের কান্দর বিলে নুরুন্নবীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুরুন্নবী ছেলে হাসেম আলী দূর্গাপুর থানায় বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয়রা ফুলজান বিবির বাড়ি ঘেরাও করে। পরে পুলিশ ফুলজান বিবি, তার স্বামী দেরাজ মিস্ত্রি, ছেলে আব্দুর রহিম ও মফিজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরিত হলে ছেলে আব্দুর রহিমের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আদালতে ফুলজান বিবি ও মফিজ উদ্দিন হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেন।