রাত পোহালে হাজার ইউপিতে ভোট, আগেই নির্বাচিত ৫৬৯
উৎসব, আতঙ্ক আর সংঘাত- সবই বিরাজমান। এই অবস্থার মধ্যেই আজ রোববার তৃতীয় ধাপে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলবে। পরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল গণনা ও প্রকাশ শেষে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করবেন।
তবে, তৃতীয় ধাপের ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোট ৫৬৯ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন ১০০ জন। আর ৩৩৭ জন সাধারণ সদস্য ও ১৩২ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্যও ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, তাঁরা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। এ ধাপের নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইসি বলছে, নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য ভোটের পরেও তারা মাঠে থাকবে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেওয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। ভোটকেন্দ্রে কেউ ঝামেলা করার চেষ্টা করলেই গ্রেপ্তার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বাদ দিলে তৃতীয় ধাপে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৫০ হাজার ১৪৬ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে চার হাজার ৪০৯ জন চেয়ারম্যান পদে, ১১ হাজার ১০৫ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে এবং ৩৪ হাজার ৬৩২ জন সাধারণ সদস্য পদে লড়বেন।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটে না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন।
এ ছাড়া অষ্টম ধাপের নয়টি পৌরসভাতেও ভোট হবে আজ রোববার।
ইসি জানিয়েছে, এ ধাপের ইউপি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়। ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউপি ও মুন্সীগঞ্জের আধারা ইউপিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ উপজেলার অন্যান্য ইউপি নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এসব নির্বাচনে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বেশি ঝামেলা দেখছেন ইসির কর্মকর্তারা। ইসির আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইউপি ভোটকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু নির্বাচনি এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে এবার। এর আগে দুই ধাপের ইউপি ভোটের আগে-পরে ও ভোটের দিন সহিংসতায় অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। পাশাপাশি সব পক্ষের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। গত শুক্রবার মধ্যরাতে এ ধাপের সব নির্বাচনি এলাকায় প্রচারের সময় শেষ হয়েছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা গত বুধবার বলেছেন, “এলাকার মাস্তান বা দোষী লোক, যেগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে, তাদের আগাম গ্রেপ্তার করার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি। সেগুলো তারা করবে। আগামী নির্বাচনে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব নির্বাচনি সহিংসতা রোধ করার জন্য। সহিংসতা ঘটতে পারে এমন ‘পকেটগুলো’ চিহ্নিত করে আগাম গোয়েন্দা তথ্য নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নজরদারি বাড়ানোসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ ছাড়া নির্বাচনি পরিবেশ ভালো রাখতে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সমর্থকসহ সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন সিইসি।
সিইসির দাবি, কমিশনের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে ইউপি নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে ভোট ‘প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক’ হয়েছে। সামগ্রিক অর্থে ইউপি নির্বাচন সফল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অল্প বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে; দুর্ঘটনা ঘটেছে, হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো কিছুতেই কাম্য নয়। তবুও নির্বাচনের মানদণ্ড যদি ভোট প্রদান হয়, তাহলে আমি বলব, দুই ধাপের নির্বাচনে গড়ে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।’
গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে নির্বাচনি প্রস্তুতির বিষয়ে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে নির্বাচন ভাল হবে। আমরা কোনো আশঙ্কা করছি না। ইউপি নির্বাচনে ঘরে ঘরে প্রতিযোগিতা হয়। পাড়ায় পাড়ায় প্রতিযোগিতা হয়। যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা আশা করছি, একটা ভাল নির্বাচন হবে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে।’
তৃতীয় ধাপে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল এক হাজার সাতটি ইউপির। বিভিন্ন কারণে স্থগিত হয়েছে সাতটি ইউপির ভোট। আজ রোববার ভোট হবে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে। এতে মোট ভোটার দুই কোটি এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক কোটি ২১ লাখ পাঁচ হাজার ৪২৩ জন আর নারী ভোটার ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৩০ জন। এ ছাড়া হিজড়া ভোটার আছেন ১৯ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১০ হাজার ১৫৯টি। ভোটকক্ষ ৬১ হাজার ৮৩০টি।
করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় প্রথম ধাপে এ বছরের ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনের ভোট হয়।
এরই মধ্যে পাঁচ ধাপের ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে কমিশন। প্রথম দুই ধাপে প্রায় এক হাজার ২০০ ইউপিতে ভোট শেষ হয়েছে। চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর ৮৪০ ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। পঞ্চম ধাপে ৭০৭ ইউপিতে ভোট হবে ৫ জানুয়ারি।