রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে শত নাগরিকের বিবৃতি
ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের দাবিতে দেশের একশজন বিশিষ্ট নাগরিক একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আজ শনিবার বিকেলে সাংবাদিক পাভেল রহমান ও তন্ময় মোদক স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় শতবর্ষ আগে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বিদ্যাভূষণ পাড়ার রামনাথ বিশ্বাস বাইসাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন ভূ-পর্যটনে। দেশে দেশে ভ্রমণ করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি, বাঙালির ঘরকুনো অপবাদ ঘুচানো এই মানুষটি লিখেছেন ভ্রমণবিষয়ক গোটা চল্লিশেক বই। উদার-অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী রামনাথের জন্ম ১৮৯৪ সালে। ভ্রমণপিপাসু এই মানুষটি থিতু হতে চেয়েছিলেন নিজ গ্রাম বানিচংয়ে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর কলকাতায় চলে যেতে বাধ্য হন। সেখানেই ১৯৫৫ সালে মারা যান। কলকাতায় তাঁর নামে রয়েছে একটি সড়ক, কিন্তু নিজভূমে বেদখল হয়ে গেছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিও।’
‘আমরা জানতে পেয়েছি, বাড়িটির দখলদার আবদুল ওয়াহেদ মিয়া আল-বদর পরিবারের সদস্য। নিজে এক সময় জামায়াত-বিএনপি করে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগে। যোগ দিয়ে রীতিমতো ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন। তারই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রামনাথের বাড়ি দেখতে যাওয়া পর্যটক, বাইসাইকেল রাইডার ও সাংবাদিকের ওপর বিভিন্ন সময় হামলা চালিয়েছেন। সর্বশেষ গত ১১ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূরসহ চার সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন দখলদার ওয়াহেদ ও তাঁর ছেলেদের হাতে।’
‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এই ঘটনার পর ওয়াহেদকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। আমরা মনে করি শুধু দল থেকে বহিষ্কার করা বড় কোনো সমাধান নয়। রামনাথ বিশ্বাসের বসতবাড়িটি দখলদারের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। আমাদের জানা মতে, ওই বাড়ির প্রায় পাঁচ একর জমির সবটুকুই এখন সরকারি খাস খতিয়ানে। প্রকৃতপক্ষে সরকারই এ জমির মালিক। তাই বিস্মৃতপ্রায় ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের স্মৃতি রক্ষার দায়িত্বও সরকারের।’
‘আমরা জেনেছি, বাংলাদেশের ভ্রমণ লেখক ও বাইসাইকেল রাইডাররা এবার ২৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) বিশ্ব পর্যটন দিবসে হবিগঞ্জ থেকে সাইকেল চালিয়ে বিদ্যাভূষণ পাড়ায় যাচ্ছেন বাইসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণকারী রামনাথ বিশ্বাসকে স্মরণ করতে। সেই লক্ষ্যে লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা মিলে গঠন করেছেন ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ কমিটি। ওই কমিটি পর্যটন দিবসের প্রতীকী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রামনাথের বাড়িটি পুনরুদ্ধারের পর সেখানে ভ্রমণবিষয়ক বইয়ের একটি বিশেষায়িত পাঠাগার এবং বাইসাইকেল মিউজিয়াম গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে। একই সাথে প্রতি বছর বিশ্ব পর্যটন দিবসে রামনাথ বিশ্বাসকে নিয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনকে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা তাঁদের এই দাবিগুলোর প্রতিও সমর্থন ব্যক্ত করছি।’
বিবৃতিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁরা হলেন- রামেন্দু মজুমদার, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শাহরিয়ার কবির, আহমেদ ইকবাল হায়দার, শিমূল ইউসুফ, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, গোলাম কুদ্দুছ, মো. আহ্কাম উল্লাহ, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, জয়দুল হোসেন, ফেরদৌসী মজুমদার, সাইমন জাকারিয়া, মোস্তফা মামুন, সৈয়দা রত্না, আহসান হাবিব নাসিম, অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, মাসুম রেজা, মুস্তাফিজ শফি, মোহাম্মদ বারী, শুভাশিস সিনহা, কামাল উদ্দীন কবির, আবু সাঈদ খান, রাহুল আনন্দ, কনক আদিত্য, আলফ্রেড খোকন, ত্রপা মজুমদার, বাকার বকুল, আশিকুর রহমান লিয়ন, তানভীন সুইটি, সাজু খাদেম, তুহিন ওয়াদুদ, শেখ রোকন, কাজী এম আনিছুল ইসলাম, জাফর আহমদ রাশেদ, সামিনা লুৎফা, ফারহা তানজীম তিতিল, গাজী নাসিরুদ্দিন আহমেদ, রাহমান নাসির উদ্দিন, অধ্যাপক ঈশানী চক্রবর্তী, সুদীপ চক্রবর্তী, হাফিজ রশিদ খান, দীপায়ন খীসা, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, জাকির হোসেন, আহমেদ মাওলা, রফিউর রাব্বি, সঞ্জয় সরকার মুক্তনীল, পিয়াস মজিদ, স্বকৃত নোমান, মোজাফফর হোসেন, কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন, সাইফুল জার্নাল, সৈয়দ মামুন রেজা, নুসরাত শারমীন, মজুমদার বিপ্লব, কাজী শহিদুল ইসলাম নাজু, আশরাফুল ইসলাম বাবু, কাজী বুশরা আহমেদ তিথি, অনন্ত হিরা, ফাহিম মালিক ইভান, আমিনুর রহমান মুকুল, নূনা আফরোজ, চারু পিন্টু, চৈতালী হালদার, অপু মেহেদী, বাবুল বিশ্বাস, সাইদুর রহমান লিপন, প্রশান্ত হালদার, মোহাম্মদ আলী হায়দার, মফিদুল হক, পাভেল পার্থ, অধ্যাপক নিসার হোসেন, সৈয়দ দুলাল, খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, পিনাকী রায়, টিপু চৌধুরী, জোবাইদা নাসরীন, পারভেজ হাসেম, মিজানুর রহমান, আহাম্মেদ গিয়াস, রওনক হাসান, ইউসুফ হাসান অর্ক, ভবানী শংকর রায়, আহমেদ নূর, জফির সেতু, হোসনে আরা কামালী, মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু, শামসুল আলম সেলিম, মোস্তাক আহমাদ দীন, রজতকান্তি গুপ্ত, প্রণবকান্তি দেব, পার্থ তালুকদার, রাজীব চৌধুরী, সুমনকুমার দাশ, মুস্তাফিজুর রহমান রূপম, শেখ আদনান ফাহাদ, আবুসালেহ আহমদ, আব্দুর নূর ও মো. নাসির।