শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি : উদ্ধার ২৬ লাশ, নিখোঁজ অনেকে
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে তীরে নিয়ে আসার পর তল্লাশি চালিয়ে আরও ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক আজ সোমবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরও অনেকে।
এর আগে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে তীরে নিয়ে আসে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে কতজন যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
নৌপুলিশ কর্মকর্তা মো. ইউনুস এর আগে জানিয়েছিলেন, নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও কোস্টগার্ডের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিখোঁজদের স্বজনেরা ঘটনাস্থলে আহাজারি করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডুবে যাওয়া লঞ্চের ভেতর আরও মরদেহ আছে। এ ছাড়া কিছু মরদেহ স্রোতে ভেসেও যেতে পারে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ গতকাল রোববার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, লঞ্চডুবির কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।
শীতলক্ষ্যা নদীতে ট্যাংকারের ধাক্কায় গতকাল এম এল ছাবিত আল হাসান নামের মুন্সীগঞ্জমুখী একটি লঞ্চ অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর চরসৈয়দপুর এলাকার ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়া সহকারী উপপরির্দশক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জের দিকে রওনা দেয়। সৈয়দপুর কয়লাঘাট চায়না ব্রিজের সামনে গেলে একটি ট্যাংকারের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে ছাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি অর্ধশত যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়।
লঞ্চমালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, লঞ্চটি সন্ধ্যা ৬টার কিছু সময় পর নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যায়। পথে ঝড়ের কবলে পড়লে এটি দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়।
নারায়ণগঞ্জ নৌপুলিশ সুপার মীনা মাহমুদা জানান, দুর্ঘটনাটি শীতলক্ষ্যা নদীর চায়না ব্রিজসংলগ্ন স্থানে ঘটেছে।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি ও তড়িৎ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গতকাল বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি ছাবিত আল হাসান প্রায় ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার পথে কয়লাঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রিমিয়ার সিমেন্টসংলগ্ন নদীতে এসকে ৩ কোস্টার জাহাজের আঘাতে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ডুবে যায়।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র দাস জানান, ১১ যাত্রীকে উদ্ধার করে তিনজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আটজন সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে গেছে।
লঞ্চডুবি থেকে বেঁচে ফেরা এক যাত্রী দাবি করেন, অন্য দিন লঞ্চে ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী থাকে। তবে গতকাল সন্ধ্যার ওই লঞ্চে শতাধিক যাত্রী ছিলেন। লকডাউনের কারণে অনেকে মুন্সীগঞ্জের গ্রামে ফিরছিলেন।