‘সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল’
বর্তমান সময়ে তরুণ-তরুণীদের কাছে সরকারি চাকরি লোভনীয় হলেও ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে খাগড়াছড়িতে। সরকারি চাকরিজীবী নরোত্তম বৈঞ্চব তাঁর চাকরি ছেড়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করতে গিয়ে হারিয়েছেন দুটোই।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে ভোটাভুটির পরিবর্তে কাউন্সিলদের প্রস্তাব সমর্থনে নতুন কমিটির সভাপতির নাম ঘোষণা করায় কপাল পুড়েছে সরকারি চাকরিজীবী নরোত্তমের।
আজ সোমবার বিকেলে খাগড়াছড়ি টাউনহলে ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে বের হওয়ার পথে কাউন্সিলরা উপহাসমূলক এ মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কাউন্সিলর জানান, দলের নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার এবং সুবিধা আদায় করতে গিয়ে আম-ছালা সবই গেছে নরোত্তমের।
পানছড়ি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী নরোত্তম বৈঞ্চব খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। আজ সোমবার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি চাকরি করেও দলের পদে প্রার্থী হওয়া নিয়ে খোদ দলের ভেতরেই ছিল কানাঘুষা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের লোভনীয় পদের জন্যই তিনি সরকারি চাকরি ছাড়ছেন চাউর হলে দলের মধ্যে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জানা গেছে, নরোত্তম বৈঞ্চব পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে গত ১৬ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাঁর পদ পানছড়িতে থাকলেও সংযুক্তিতে ছিলেন খাগড়াছড়ি সদরে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করেও তিনি দিব্যি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। মাঠে ময়দানে ছিলেন সক্রিয়। সরকারি চাকরির পাশাপাশি খাগড়াছড়ি সদর শাখা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা শুরু করলে বিষয়টি সবার নজর কাড়ে। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বিশাল তোরণ তৈরি করে ভোট ও দোয়া চাওয়া, উপজেলাজুড়ে পোস্টার সাঁটানো, শহর ও শহরতলীতে ব্যানার ও প্লেকার্ড ঝুলিয়ে বেশ সাড়া ফেলেন।
সরকারের নির্দেশনায় যেখানে যুবলীগের প্রভাব বিস্তারকারী নেতাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশান চলছে, সেখানে একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও কীভাবে যুবলীগের সভাপতি পদে থাকেন এবং কোনো দলের সদস্য হতে পারেন? এমন প্রশ্ন তোলেন অনেকে। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীরাও সভাপতি পদে তার প্রার্থী হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সদর আওয়ামী লীগের সদস্য বিদায়ী সভাপতি খোকনেশ্বর ত্রিপুরা জানান, শুনেছি তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য ফরম পূরণ করবেন। তবে বিষয়টি ছেড়ে দেন জেলা আওয়ামী লীগের ওপর।
জেলা যুবলীগের সভাপতি যতন বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবিতে নরোত্তম বৈঞ্চবের যাওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। এ ছাড়া যেহেতু তিনি এখনো যুবলীগের কমিটিতে আছেন, পদত্যাগও করেননি। সরকারি চাকরি ছেড়েই রাজনৈতিক দলের পদ গ্রহণ করার সুযোগ নেই।’
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, ‘চাকরি ছেড়ে দেওয়ার এক বছরের আগে দল করার সুযোগ সম্ভবত কারো নেই। নরোত্তম বৈঞ্চব নিয়ে প্রশ্ন উত্থিত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।’
এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সোহাগময় চাকমা বলেন, ‘অক্টোবরের শেষের দিকে নরোত্তম বৈঞ্চব পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। সেটি জেলা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিপ্লব বড়–য়া বলেন, ‘তার পদত্যাগের কাগজ হাতে পেয়েছি। প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদনের জন্য গত বুধবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
সরকারি কাজে ফাঁকি দেওয়া এবং চাকরিরত অবস্থায় দল করা যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে নরোত্তম বৈঞ্চব বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ ত্যাগ করে দলের সদস্য হয়েছি। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি। গত ২৮ অক্টোবর সরকারি চাকরি থেকে ইস্তাফা দিয়েছি এবং যুবলীগ থেকে নিয়মানুযায়ী পদত্যাগও করেছি।’
সরকারি চাকরিরত অবস্থায় কীভাবে যুবলীগ করতেন? জানতে চাইলে নরোত্তম বৈঞ্চব বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সনজিব ত্রিপুরা সভাপতি, বিশ্বজিৎ রায় দাশ সাধারণ সম্পাদক
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন উপলক্ষে আজ দুপুরে পৌর টাউন হল মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকনেশ্বর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগসহ দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হয়। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এ কাউন্সিলে সভাপতি, সম্পাদক পদে মোট আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সদর উপজেলাসহ পাঁচটি ইউনিয়নের ২৩১ জন কাউন্সিলরের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা থাকলেও উপস্থিত কাউন্সিলদের প্রস্তাব সমর্থনের ভিত্তিতে সনজিব ত্রিপুরাকে সভাপতি ও বিশ্বজিৎ রায় দাশকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।