সাহেদের কারাদণ্ড আমাদের সমাজে ভদ্রবেশী অপরাধীদের জন্য একটি বার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন বিচারক। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ আজ সোমবার দুপুর ২টার দিকে সাহেদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার সময় এ কথা বলেন।

বিচারক বলেন, ‘সাহেদ খুবই চতুর প্রকৃতির। মাদক মামলায় রিমান্ডে থাকার সময় পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছিলেন, উত্তরায় তাঁর একটি পরিত্যক্ত গাড়ি রয়েছে। পরে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে তা উদ্ধার করে। কিন্তু সাহেদ আদালতে বলেছেন, তিনি এ গাড়ি চেনেন না। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, সাহেদ পূবালী ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা লোন নিয়ে গাড়ি কিনেছেন এবং তা ব্যবহার করেছেন। এতে বোঝা যায়, সাহেদ কতটুকু চতুর। তিনি আদালত থেকে কোনো ধরনের অনুকম্পা বা ছাড় পেতে পারেন না। তাই অস্ত্র আইনের ১৯(এ) ধারায় সাহেদকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও একই আইনের ১৯(এফ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।’

আজ দুপুর ২টার দিকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে গুলি রাখার অপরাধে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি আদেশ একসঙ্গে  কার্যকর হবে।

মামলার সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল এনটিভি অনলাইনকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন।

এর আগে দুপুরে কারাগার থেকে আদালতে সাহেদকে হাজির করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারাগার থেকে আদালতে আনার সময় সাহেদের হাতে হাতকড়া ও মাথায় হেলমেট দেখা যায়।

মামলার সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল গতকাল রোববার এনটিভি অনলাইনকে এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রায়ের দিন ধার্য করেন।

তাপস কুমার পাল আরো বলেন, ‘এ মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরা সাহেদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এ মামলায় প্রমাণ হয়েছে, সাহেদ দোষী। আমরা আদালতের কাছে সাহেদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কামনা করেছি।’

গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এরপর গত ১৯ জুলাই সাহেদকে নিয়ে গভীর রাতে অভিযান পরিচালনা করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। অভিযানে সাহেদের ব্যক্তিগত একটি গাড়ি, একটি অবৈধ অস্ত্র ও ১৫ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। সে ঘটনায় সাহেদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলার পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাহেদকে হাজির করা হলে বিভিন্ন মেয়াদে তাঁকে রিমান্ডে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া সাতক্ষীরায় অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় দুটি মামলা করা হয়।

গত ২৭ আগস্ট এ মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর মামলার নথি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। সে মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে গত ৯ সেপ্টেম্বর দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে র‍্যাব।

এ ছাড়া সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে চার হাজার করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে। একজন কম্পিউটার অপারেটর বসে বসে সাড়ে চার হাজার রিপোর্ট তৈরি করেছেন। মনগড়া পজিটিভ-নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছেন। এসব ঘটনায়ও পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলা রয়েছে সাহেদের বিরুদ্ধে।