সুনামগঞ্জে গুজব ঠেকাতে ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার ঘটনায় সব ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে এবং ধর্মীয় গুজব প্রতিহত করতে মতবিনিময় সভা হয়েছে। নোয়াগাঁও গ্রামের ঘটনায় দেশ-বিদেশ জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ায় শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের অনুরোধে হেফাজতে ইসলামের আগামীকাল রোববারের জামালগঞ্জ উপজেলায় মাওলানা মামুনুল হকের সমাবেশ আয়োজকেরা আজ শনিবার বিকেলে বাতিল করেছেন বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সব স্তরের জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনুরোধে আয়োজকেরা সমাবেশ বাতিল করেছেন।’
এর আগে আজ শনিবার সুনামগঞ্জ জেলার ইমাম-ওলামা ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শান্তি-সম্প্রীতি সৌহার্দ্য বজায় রাখা এবং ধর্মীয় গুজব প্রতিহতকরণের বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দুপুর ১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা হয়। সভায় জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ইমাম-মুয়াজ্জিনরা অংশগ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-সিলেটে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, সুনামগঞ্জ মাদানিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল বছির, মাওলানা নূর উদ্দিন, জেলা ইমাম মুয়াজ্জিন পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল রকিব, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা ইদ্রিস আহমদ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান এবং ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে সভায় উপস্থিত সবাই রোববার জামালগঞ্জ ও দোয়ারাবাজারে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সমাবেশ বাতিল অথবা পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
সভায় উপস্থিত ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম শান্তিতে বিশ্বাসী। সংখ্যালঘুর নিরাপত্তায় বিশ্বাসী। শাল্লার ঘটনাটি নিন্দনীয় কাজ। এই ঘটনা ইসলাম সমর্থন করে না। সুনামগঞ্জের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য পরিকল্পতিভাবে কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে সুনামগঞ্জের কোনো আলেম-ওলামায়ে জড়িত নন। সুনামগঞ্জের শান্তি-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আলেম-ওলামা ও ইমাম-মুয়াজ্জিমরা সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।
সভায় পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘শাল্লার ঘটনায় কারো সঙ্গে কোনো বেআইনি আচরণ করা হবে না। আমরা নিশ্চিত না হয়ে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করব না। বেআইনি ঘটনা ঘটেছে, আইনি পন্থায় সমাধান হবে। নোয়াগাঁও গ্রামের ঘটনায় তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়ায় সঠিকভাবে কিছু বলা যাবে না। পরিবেশ-পরিস্থিতির জন্য কিছুদিন আপাতত এই ধরনের সভা-সমাবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
সভায় জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘শাল্লার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় চলছে। তাই আপাতত কোনো জলসা বা সমাবেশ নয়। পরিবেশ শান্ত হলে সভা-সমাবেশ করা যাবে।’
যে কেউ যে কোনো জায়গায় বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তি করে কিছু লিখলে বা শেয়ার করলে নিজেরা কোনো পদক্ষেপ বা আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় পুলিশ বাহিনীকেও অবগত করতে বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, কেউ কোনো গুজবে কান দিবেন না। গত বুধবার একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারব।
আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমরা আগের মতো একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ফিরে যেতে পারব।’