সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে চারজনকে দাফন, মামলা হয়নি
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সময় নিহত চারজনের লাশ চোখের জলে করবে শায়িত করেছেন স্বজনরা। বাবা ও দুই ছেলেকে কবর দেওয়ার সময় উপজেলার ইসলামপুর এলাকায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কাঁদতে কাঁদতে স্বজনরা এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
এর আগে আজ বুধবার সকালে নিহত চারজনের লাশ ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন মাটিরাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দিন ভুইয়া।
এ সময় ওসি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। ফলে মামলা হয়নি। খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে পাঁচটি লাশেরই ময়নাতদন্ত হয়েছে। বিজিবি সদস্যের লাশ বিজিবিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসী চারজনের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল যে দুই গ্রামবাসীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল তাদের রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ওসি।
লাশ হস্তান্তরের সময় মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (মাটিরাঙা সার্কেল) মো. খোরশেদ আলম, মাটিরাঙা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান, মাটিরাঙা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিরণজয় ত্রিপুরা, মাটিরাঙা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. আলাউদ্দিন লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ দাবি করেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে জ্বালানি কাঠ পরিবহনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার গাজীনগরের বিজিবি চেকপোস্টের কিছুটা দূরে গাজীনগর বাজারে বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় একই পরিবারের তিন ব্যক্তিসহ চার গ্রামবাসী নিহত হন। পাশাপাশি বিজিবি এক সদস্যও নিহত হন।
নিহতরা হলেন বিজিবি-৪০ ব্যাটালিয়নের সদস্য সিপাহী মো. শাওন খান (৩০)। এ ছাড়া গ্রামবাসী হচ্ছেন- আহমদ আলী (২৫), আলী আকবর (২৭) ও তাদের বাবা সাহাব মিয়া (৫৫) এবং একই গ্রামের বাসিন্দা মফিজ মিয়া (৫০)।
এর মধ্যে বিজিবি সদস্য মো. শাওন খানের লাশ গুইমারা বিজিবি সেক্টরে জানাজা শেষে তাঁর গ্রামের বাড়ি বড়গুনার বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ বাসণ্ডা গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আজ সকালে চারটি লাশ একে একে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে উপজেলার মুসলিমপাড়া ও গাজীনগর পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশ জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই পরিবারের সদস্যরা। লাশ দেখতে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, আত্মীয়-স্বজন জড়ো হন নিহতদের বাড়িতে। সর্বত্রই নেমে আসে শোকের ছায়া।
প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টায় আলুটিলা বটতলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চারজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বটতলী কবরস্থানে মো. মফিজ মিয়াকে এবং ইসলামপুর কবরস্থানে সাহাব মিয়া, তাঁর দুই ছেলে আকবর আলী ও আহাম্মদ আলীকে দাফন করা হয়।
জানাজার আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ধৈর্য ধারণের জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। দাফন অনুষ্ঠানে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ছিল।
এ দিকে জেলা প্রশাসক নিহত প্রত্যেককে দাফন করার জন্য ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন।
এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবির পক্ষ থেকেও আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানানো হয়েছিল, সকালে একটি ট্রলিতে করে জ্বালানি কাঠ নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দেন। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বিজিবির গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আহমদ আলী, আলী আকবর, তাদের বাবা সাহাব মিয়া। পরে চট্টগ্রামের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে মারা যান মফিজ মিয়া। সংঘর্ষের সময় পাল্টা হামলায় নিহত হন বিজিবি সদস্য শাওন।
একদিকে, পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন বিনা উসকানিতে বিজিবি সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছেন।
অন্যদিকে বিজিবির দাবি, ৬০ থেকে ৭০ জন নারী-পুরুষ তাদের অবরুদ্ধ করে দুটি রাইফেল ছিনিয়ে নিলে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হয়।