স্কুলড্রেস না পরায় বেত্রাঘাত, অভিমানে থানায় অভিযোগ দিয়ে আত্মহত্যা
নরসিংদীর শিবপুরে ড্রেসকোড না মানায় স্কুলশিক্ষার্থীকে তিরস্কার ও বেত্রাঘাত করায় শিক্ষকার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর বিষপানে আত্মহত্যা করেছে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ ঘটনায় স্কুল ও পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর পূর্বে শিক্ষিকাকে দায়ী করে থানায় অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহাম্মেদ। নিহত শিক্ষার্থী প্রভা (১৩) শিবপুরের বাঘাবো জয়মঙ্গল গ্রামের প্রবাসী ভুট্টো মিয়ার মেয়ে।
স্কুল ও থানা সূত্রে জানা যায়, নিহত প্রভা শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিনের মতো আজও সে স্কুলে আসে। নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের নির্ধারিত ড্রেস সাদা। নিহত প্রভা স্কুলে আসার সময় সাদা পায়জামার পরিবর্তে ধূসর রঙের গেঞ্জির টাইস পরে স্কুলে আসে। স্কুলে টিফিন আওয়ার শেষে বেলা পৌনে ৪টার দিকে শারীর চর্চার ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষকা নার্গিস সুলতানা কনিকা। ওই সময় ড্রেসকোড না মানায় স্কুলছাত্রী প্রভাকে তিরস্কারসহ কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন শিক্ষিকা।
এরপর ক্ষোভে ও অভিমানে স্কুল থেকে বের হয়ে ইঁদুর নিধনের ট্যাবলেট খেয়ে ফেলে। এ অবস্থায় সে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিহত প্রভা শিবপুর থানায় যায়। সেখানে গিয়ে থানায় কর্মরত ডিউটি অফিসারের কাছে শিক্ষিকা নার্গিস সুলতানা কনিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।
অভিযোগে সে উল্লেখ করে, ওই শিক্ষিকা সবসময় কারণে-অকারণে তাকে তিরস্কার করেন এবং সব শিক্ষার্থীর সামনে অপমান করেন। তাই সে বিষ পানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তার মৃত্যুর জন্য শিক্ষিকা দায়ী।
এর পর পরই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে থানা পুলিশ দ্রুত স্কুলের প্রধান শিক্ষককে খবর দেন এবং স্কুলছাত্রীকে শিবপুর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকেই স্কুল শিক্ষিকা গা-ঢাকা দিয়েছেন।
শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর উদ্দিন মো. আলমঙ্গীর বলেন, ‘ড্রেসকোড না মানায় তাকে শাসন করা হয়েছিল। এতে সে অপমান বোধ করে এ পথ বেছে নিয়েছে। আমরা জানার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।’
শিবপুর থানার ওসি সালাউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, ‘বিকেলে শিক্ষার্থী প্রভা থানায় আসে। এসে স্কুলের শিক্ষিকা কনিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। অভিযোগে উল্লেখ করে, তার মৃত্যুর জন্য শিক্ষিকা কনিকা দায়ী। ওই শিক্ষকা তাকে প্রায় সময়ই অপমান-অপদস্ত করে। তাই সে ইঁদুর মারার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এই কথা বলতে বলতেই সে ঢলে পড়ে যায়। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
ওসি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীর অভিযোগটি আমরা আমলে নিয়ে শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছি।’