৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি কামাল উদ্দিন
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি পুলিশের চাকরি ছেড়ে যুদ্ধে যাওয়া সাতকানিয়ার কামাল উদ্দিন। স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ডু থানায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
যুদ্ধ শুরু হলে পুলিশের পোশাক রেখে সিভিল ড্রেসে থানা থেকে পালিয়ে এসে তারই মামা হাবিলদার মেজর (অব.) হাবিবুর রহমান, বড় ভাই ইপিআর সুবেদার মেজর (অব.) আহমদ কবিরের সঙ্গে দেখা করেন। তারা তিনজন রাজাকার কমান্ডার মতলবকে হত্যা করে তার সঙ্গে থাকা থ্রি নট থ্রি রাইফেলটি ছিনিয়ে নেন। এরপর সাতকানিয়ার থানার (বর্তমান লোহাগাড়া থানা) হানিফার চর ধলিবিলা হাইস্কুল ক্যাম্পে যান। ট্রেনিংপ্রাপ্ত তিনজনই ক্যাম্পে অবস্থানকালীন দুদিনের মাথায় বান্দরবান আওয়ামী লীগের সভাপতি শফি ক্যাম্পে এসে বান্দরবানে রাজাকাররা ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে বলে জানান। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে যেতে বললে ক্যাম্পের গ্রুপ কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বান্দরবান যান। সেখানে রাজাকারদের সঙ্গে যুদ্ধ করে একাধিক রাজাকারকে হত্যার করেন। এরপর দোহাজারী ব্রিজের উত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অবস্থান করছে—এমন খবর পেয়ে তারা দোহাজারী ব্রিজের দক্ষিণে অবস্থান নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।
যুদ্ধ করে রাজাকার ও হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করলেও নিজের নামটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় লেখাতে পারেননি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। সরকার প্রদত্ত ভাতা নয়, অন্তত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নামটি লেখা দেখে মরতে চান রণাঙ্গনের এই সম্মুখযোদ্ধা।
প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আমার সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সরকারের প্রদত্ত নানা সুবিধা ভোগ করছেন। ছেলেমেয়েরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাচ্ছে। অথচ আমি আর্থিক অনটনে পড়ে নিঃস্ব অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। বয়স হয়েছে যেকোনো দিন মারা যাব। মরার আগে অন্তত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নামটি দেখে যেতে চাই।
কামাল উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে যুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক ছোবহান এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, কামাল উদ্দিন আমাদের সঙ্গেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। পুলিশে চাকরি করার কারণে ট্রেনিংপ্রাপ্ত হওয়ায় সম্মুখযুদ্ধে অসাধারণ দক্ষতা ছিল তার। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম না থাকাটা দুঃখজনক। আমি নিজেও তাকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। আমার গ্রুপে যুদ্ধে অংশ নিয়ে তালিকাভুক্ত হতে না পারা আমার জন্য দুঃখজনক ব্যাপার।