আইনমন্ত্রীর সামনে বিচারকদের দাবি তুললেন প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটা অঙ্গ। আমরা নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে চাই। বিচার বিভাগের সহযোগিতা ছাড়া প্রশাসনিক বা নির্বাহী বিভাগের কোনো কাজ কার্যকর হবে না। আমি কাউকে আঘাত করার জন্য কথা বলি না। আমি বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য বলি।
আজ শনিবার দুপুরে বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারের আরো দুটো অঙ্গের (নির্বাহী ও প্রশাসন) বিষয়ে কোনোভাবে অস্বীকার করছি না। এ দুই প্রতিষ্ঠান যা-ই করুক না কেন, উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, অপরাধ করলে পুলিশ প্রশাসন অপরাধের তদন্ত করে। তার বিচার করা বিচার বিভাগের কাজ। চাইলে অপরাধীকে আজীবন জেলে রাখা যায় না। আমি এটাই বিভিন্ন বক্তব্যে তুলে ধরেছি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাকে কিছু বলতে হবে, আমি যদি মুখ বন্ধ করে থেকে যাই, তাহলে আজকে এতজন তারকা আমাকে সংক্ষিপ্ত আকারে যে অভিযোগ করলেন, সে ধরনের অনেক বিচারক মুখ সহ্য করে যাচ্ছেন, তাঁদের বুক ফেটে যাচ্ছে, আমাদের বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু বলতে পারছেন না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা বিচারক। আমি এটাও বিশ্বাস করি, আমরা বিচারকরা ট্রেড ইউনিয়নের মতো দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হবো না। বিচারকের মতো কাজ করব। আমি ইচ্ছা করে কাউকে আঘাত দিতে চাইনি। আমি যা বলি সেটা হলো, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটা অঙ্গ। আমরা চাই, তাদের সঙ্গে সহযোগিতার মধ্যেমে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি তো আমাদের পরিবারের সদস্য। আপনি জানেন যে, আমাদের কাজ করতে হয় বেশ কিছু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মান-মর্যাদা রক্ষার্থে কিছু ন্যায্য দাবি রয়েছে বিচারকদের। এ ব্যাপারে যদি কিছু বলে থাকি আমি, কোনো ব্যক্তিকে কোনো আঘাত করার জন্য আজ পর্যন্ত কিছু বলি নাই।’
আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওপর পর্যায়ে পদ খালি হলে না নিচ থেকে পূরণ করবেন। যেমন এ বছরের শেষের দিকে ১০ জন জেলা জজ অবসরে যাবেন। এটার কোনো তথ্যভিত্তিক হিসাব নেই। কিন্তু জনপ্রশাসনে সব অফিসারের তথ্য আছে। যেটা বিচার বিভাগে নেই। আপনার মন্ত্রণালয়ে নেই। অন্য সব মন্ত্রণালয়ে আছে। সুপ্রিম কোর্টে আপডেট করছি। তবে আপনার প্রস্তাব ছাড়া এটা কার্যকর হবে না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যাকে চান দিয়ে দেব। তবে আপ টু ডেট থাকতে হবে। তাহলে মামলাগুলো তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হবে। অতিরিক্ত বিচারক যত পদ খালি আছে, সেগুলো পূরণ করতে হবে। খালি রাখা যাবে না। জেলা জজের পদেও একই রকম করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম আছে। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরদেরও ট্যাব দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিচারকরা কেউ পাচ্ছে না। বিচারকদের হাতে লিখতে হচ্ছে।
আমি বললাম, বিচার প্রশাসন তো সরকারের আলাদা কিছু নয়। এটাকে বাদ দিয়ে তো অন্য কিছু হবে না। তখন আমাদের ১২৫টি ল্যাপটপ দিল, সেগুলো মাঠ পর্যায়ের বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের বিতরণ করা হয়েছে। মহিলা বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হাতে আর নয়। এখন ল্যাপটপে পারবেন। ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে অটোমেটিকভাবে সাক্ষ্য নেওয়া হবে। বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশনের জন্য যে উদ্যেগ নেওয়া হচ্ছে, তা প্রধান বিচারপতি শিগগিরই উদ্বোধন করবেন।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে ডে-কেয়ার সেন্টার চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। শুধু বিচারকরা নয়, মহিলা স্টাফদের জন্য এ সুবিধা থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ১৯ শতাংশ মহিলা জজ রয়েছেন। যেখানে ইংল্যান্ডে মাত্র ১০ শতাংশ। এ সময় সারা দেশের মহিলা জজরা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের সভাপতি নুরুন্নাহার ওসমানীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি নাঈমা হায়দার প্রমুখ।