অর্ধেক চিকিৎসক ছুটিতে, বাকিরা ‘উধাও’
পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ চিকিৎসক একসঙ্গে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে কক্সবাজারে গেছেন। সাধারণ ছুটিতে আছেন আরো পাঁচজন চিকিৎসক। বাকি ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও গত দুই দিন দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ ২৯টি। এর মধ্যে ২০১০ সালে যোগদানের পর থেকে অনুপস্থিত আছেন চারজন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ২৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১০ জন গত বুধবার ২৭ মে দুপুরের পর কক্সবাজারের উদ্দেশে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ১০ জনের এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) পাবনা জেলা শাখার সভাপতি গোলজার হোসেন। চিকিৎসকদলে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মঞ্জুরা রহমান এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাও (আরএমও) রয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচজন চিকিৎসক সাধারণ ছুটিতে আছেন।
চাটমোহরের লোকজন জানায়, একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চাটমোহর উপজেলার চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
গত শনিবার ও রোববার দুপুর ১টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে, কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। রোববার হাসপাতালের রেজিস্টার খাতায় ১০ জন চিকিৎসকের সই থাকলেও তাঁরা উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
উপজেলার বোঁথর গ্রামের নূর আলী বলেন, ‘এর আগে আমি রতন কুমারের (চিকিৎসক) কাছে চিকিৎসা নিয়েছি। আজ আসতে বলা হয়েছিল। এসে দেখি তিনি নেই।’
ছাইখোলা গ্রামের মমতা খাতুন বলেন, ‘সকাল থেকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ডাক্তারের দেখা পাইনি। অনেকক্ষণ পর অন্য এক স্বাস্থ্য সহকারীর কাছে দেখিয়েছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে বলেন, ‘শুনলাম ১০ জন চিকিৎসক বেড়াতে গেছেন। এত চিকিৎসক এক সঙ্গে ছুটিতে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।’
হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার ব্যাপারে চাটমোহর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবুল হোসেন রফিক এনটিভি অনলাইনকে জানান, তিনি দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলেন। পরে হাসপাতালের কাজে বাইরে ছিলেন। তিনজন চিকিৎসক ছিলেন শহরে পাবনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। বাকি চিকিৎসকরা সকালে এসে রোগী দেখেছেন। রোগী না থাকায় আড়াইটার আগে চলে গেছেন।
এক সঙ্গে এত চিকিৎসক ছুটি নিতে পারেন কি না জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মঞ্জুরা রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা ২৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ছুটি নিয়ে বেড়াতে এসেছি।’ এর বেশি কিছু তিনি বলেননি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) পাবনা জেলা শাখার সভাপতি গোলজার হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসকরা তাঁদের প্রয়োজনে ছুটি নিতে পারেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন শহিদ মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘যে ১০ জন চিকিৎসক কক্সবাজার ভ্রমণে গেছেন তাঁরা যথারীতি ছুটি নিয়ে গেছেন। বাকি যে চিকিৎসকরা হাসপাতালে আছেন তাঁদের দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।’ এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।