ছয় মাসের মধ্যে চলমান সন্ত্রাসের বিচার : আইনমন্ত্রী
আগামী ছয় মাসের মধ্যে চলমান সন্ত্রাসের বিচার শেষ করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
আজ সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় মন্ত্রী বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন যেসব সহিংসতা হয়েছে, সেসব সহিংসতার অপরাধের ধরন অনুযায়ী, কোনোটাতে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, কোনোটাতে সন্ত্রাস দমন আইন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন আইন কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী মামলাগুলোর তদন্ত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মামলা আদালতে পৌঁছেছে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি ‘জাস্টিজ ডিলে জাস্টিজ ডিনাইড’ সন্ত্রাস দমনের একমাত্র উপায় হচ্ছে, অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে এবং সেটা হবে তাৎক্ষণিক।’
রাজধানীর ধানমণ্ডি ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা-৪ ও ‘সন্ত্রাস, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের সভাপতিত্বে কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা উপস্থাপন করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
সভায় আরো বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, নারী প্রগতি সংঘের সভাপতি রোকেয়া কবীর, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. নুজহাত চৌধুরী।
বর্তমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশ বাঁচানোর যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করে আনিসুল হক দেশের সব মানুষকে এই যুদ্ধে শামিল হয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের কাছে কোনো কিছু প্রত্যাশা করে লাভ নেই, কারণ উনারা মানুষকে মানুষ মনে করে না। উনাদের সাথে কোনো কথা নেই, কোনো কথা হতে পারে না। এখন এটা বাংলাদেশ বাঁচানোর যুদ্ধ। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, সরকার এটাকে রাজনৈতিক বা আইনশৃঙ্খলা সমস্যা হিসেবে দেখছে। সরকার এটাকে বাংলাদেশ থাকবে কি থাকবে না, এই সমস্যা হিসেবেই দেখছে। এই সমস্যা হিসেবে দেখছে বলেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকার এক পা-ও পিছাবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদোজা চৌধুরীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন- ‘উনি তো বলেই দিয়েছেন এটা গৃহযুদ্ধ।’
বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘উনাদের সাথে সংলাপ হবে না, কারণ সংলাপ হতে হলে মৌলিক কিছু বিষয়ে বিশ্বাস করতে হয়। উনি বিশ্বাস করেন পাকিস্তানে, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে। আমি শুধু ওনাকে একটা কথাই বলতে পারি, যদি সংলাপ চান, তাহলে আপনি পাকিস্তান চলে যান। এই সংলাপই তাদের সাথে হতে পারে। আর যুদ্ধই যদি করতে চান তাহলে মনে রাখবেন ১৯৭১ সালে আপনার চেয়ে অনেক শক্তিশালী শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। এই বাংলাদেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনে আবারও যুদ্ধ করব।’
তারেক রহমানকে বিতর্কিত কথাবার্তা বলতে ব্রিটিশ সরকার নিষেধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত জানুয়ারির ১৮/১৯ তারিখে ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে, তাঁকে বলেছি, বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে লন্ডন জড়িত। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের কিছুটা লন্ডন থেকেও পরিচালিত হয়েছে। আজকে আমাদের শুনতে এবং জানতে কষ্ট হয়, ব্রিটিশ সরকার লন্ডনে একজনকে থাকতে দিয়ে আমাদের দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করতে দিচ্ছে। সেটা কিন্তু আমাদের পছন্দের না। আমি ওনাকে আরো বলেছি, আপনাদের বন্ধুত্ব আমাদের কাছে প্রয়োজনীয়। কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখবেন, সব কিছুরই সীমা আছে। এই সীমা পার হয়ে গেলে বন্ধুত্ব তখন কিন্তু নগণ্য হয়ে যায়। তখন সীমাকে চিন্তা করে ব্যবস্থা যা করার করতে হয়। আমার কাছে তথ্য আছে, এই সব বিবৃতি বক্তব্য থেকে বিরত থাকতে উনারা বলেছেন।