আম আছে, দাম নেই
চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ভালো নেই আমবাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। গত মৌসুমে এ এলাকার আমের দাম ছিল প্রতি মণ দুই হাজার ৪০০ টাকা। এ মৌসুমে তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা।
urgentPhoto
আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ মৌসুমে বাজারজাত করণে প্রশাসনের কড়াকড়ি আরোপ এবং পরিবহনে হয়রানির কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
মেহেরপুর জেলায় দেশি জাত ছাড়াও বোম্বাই, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়। গত কয়েক মৌসুম লাভ হওয়ায় বেড়েছে আম বাগানের সংখ্যা। গত দুই মৌসুমে আম পাকাতে কীটনাশক ব্যবহারের অভিযোগে এবার শুরুতেই প্রশাসনের ব্যাপক নজরদারি শুরু হয়। ৫ জ্যৈষ্ঠের আগে গাছ থেকে আম পেড়ে বাজারজাত করা যাবে না বলে নির্দেশনা জারি করেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক। ধার্য তারিখের মধ্যে স্থানীয় জাত ও বোম্বাইসহ কয়েকটি জাতের আম গাছেই পাকতে শুরু করে। কয়েকদিন পর গাছেই পেকে যায় হিমসাগর।
কয়েকটি জাতের আম একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা আম পাড়তে বাধ্য হন। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ আম পাকায় স্বাভাবিকভাবে বাজারে আমের দাম কমে যায়। গত মৌসুমে প্রতি মণ আম দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন আম বাগানের মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা।
জেলার গাংনি উপজেলার আমচাষি সিরাজ বলেন, ‘প্রশাসনিক একটা ঝামেলা হয়। গাছে আম নেমে গেছে তাও আমরা আম বেঁচতে পানিনি। রাস্তাঘাটে পুলিশ চাঁদাবাজি করে। গাড়ি আটকে পুলিশ এ চাঁদাবাজি করে।’
একই এলাকার অন্য এক আমচাষি বলেন, ‘কয়েকজন অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে আমাদের এ দুর্গতি।’
আম পাকাতে কীটনাশকের ব্যবহার ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। আম বাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে আমের পরিবহন তল্লাশি করা হচ্ছে। তা ছাড়া মেহেরপুর থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত আম পরিবহনের সময় প্রশাসনের অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযানে পড়ে নাজেহাল হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বিষমুক্ত আম বাজারজাত এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় যা যা করণীয় তাই করার কথা জানালেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা বড় ধরনের কোনো সংবাদ পাইনি যে, ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল কার্বাইড মিশ্রণ করছেন এবং কোথাও ফরমালিন মিশিয়ে আম বাজারজাত করছে এবং সরবারহ করা হচ্ছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুর উপপরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জেলার আমের সুনাম ধরে রাখা এবং নায্যমূল্য পেতে বিষমুক্ত আমের কোনো বিকল্প নেই।’
চলতি মৌসুমে জেলায় দুই হাজার ৬৫ হেক্টর আম বাগানে ৩১ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।