পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে জোড়া খুনের অভিযোগ
যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইসমাইল শেখ ও তাঁর বন্ধু আল আমিনকে হত্যার অভিযোগে যশোর কোতোয়ালি থানার পাঁচ কর্মকর্তাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি পিটিশন করা হয়েছে। আজ রোববার নিহত ইসমাইলের বাবা বেলাল উদ্দিন শেখ ওই আবেদন করেন। যশোরের বিচারিক হাকিম আবু ইব্রাহিম পিটিশনটি গ্রহণ করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
যাঁদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন যশোর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন ও আবদুর রহিম হাওলাদার, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শহিদুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম ও জসিমউদ্দিন এবং বাঘারপাড়া উপজেলার চাপাতলা গ্রামের বরুণকুমার তরফদার।
বাদীর অভিযোগ, তাঁর ছেলে ইসমাইল শেখ যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের পঞ্চম পর্বের ছাত্র ছিলেন। ২৪ মে সন্ধ্যায় ইসমাইল তাঁর বন্ধু আল-আমিনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যশোর শহরের হাইকোর্ট মোড়ের দোকানে যান। এরপর থেকে তাঁদের দুজনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরের দিন দুপুরে লোকমারফত সংবাদ পেয়ে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তাঁর ছেলেসহ দুজনের মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
মামলার বাদী বেলাল শেখ জানতে পারেন, নিহত ছেলে ও তাঁর বন্ধুর নামে অস্ত্র ও ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে দুটি এবং তাঁদের হত্যার অভিযোগে থানায় আরো একটি মামলা হয়েছে। তিনি মামলার এজাহার, ঘটনাস্থল ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে এজাহারে উল্লিখিত গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ধর্মীয় অসম প্রেমের কারণে মেয়েপক্ষের লোকজন পুলিশকে দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আসামি বরুণকুমার তরফদার পুলিশকে ব্যবহার করে ইসমাইল ও তাঁর বন্ধু আল আমিনকে অপহরণ করে রাতের কোনো এক সময় হত্যা করে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে বলে প্রচার করেন।
বিষয়টি যথেষ্ট সন্দেহের হওয়ায় তিনি (বেলাল শেখ) থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা করতে যান। কিন্তু পুলিশ তা গ্রহণ না করায় তিনি আদালতের আশ্রয় নেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি শিকদার আককাস আলী বলেন, আদালতের এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশ তিনি এখনো হাতে পাননি।
তবে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন স্বপন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে পিটিশন হলে সাধারণত বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন আদালত। এ ক্ষেত্রে পুলিশকেই তদন্তের ভার কেন দেওয়া হলো তা জানি না।
এক প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, আদালত মামলা গ্রহণ করেছে বলা যাবে না। ওসি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
গত ২৪ মে রাতে যশোর-মাগুরা সড়কের রাজাপুরের কাছে ইসমাইল শেখ ও আল আমিন নামের দুই যুবক খুন হন। ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে তাঁরা নিহত হয়েছিলেন বলে সে সময় পুলিশ দাবি করেছিল।