সাপ নিয়ে খেলা ‘ঝাপাং’
সাপের নাম শুনলেই তো কেমন গা ছমছম করে উঠে। কিন্তু সেই সাপ নিয়েই মহা উৎসাহে ও উচ্ছ্বাসে কুষ্টিয়ার ফকিরাবাদে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ঝাপাং খেলা’। আর মানুষ ভয়-ভীতি দূরে রেখে দলে দলে এসে উপভোগ করল বেঁদে-সাপুড়েদের সাপ নিয়ে নানা খেলা।
গতকাল রোববার দিনভর এ খেলায় ২৫টি দলের প্রায় দুইশ সাপুড়ে অংশ নেন। সন্ধ্যায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রাম ফকিরাবাদ। এ গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, দেবী মনসার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই দীর্ঘদিন ধরে এ গ্রামে ‘ঝাপাং খেলা’ চলে আসছে। যদিও ‘ঝাপাং খেলা’র আগের সেই জাকজমক ভাব আজ আর নেই। তবু কালের বিবর্তনে ‘ভয়ানক অথচ আকর্ষণীয়’ এই খেলা বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন গ্রামের কয়েক উদ্যোক্তা।
ফকিরাবাদ গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে নির্মিত মঞ্চে ‘ঝাপাং খেলা’ শুরু হয় সকাল ১০টায়, শেষ হয় বিকেল ৫টায়।বিষাক্ত সাপ নিয়ে খেলা দেখানোর জন্য ২৫টি দলের দুইশ সাপুড়ে জড়ো হন। প্রতিটি দলের জন্য এ খেলায় ১৬ মিনিট করে সময় নির্ধারণ করে দেন আয়োজকরা।
এই সময়ে প্রতিটি দল তাদের স্বরচিত গানের সাথে তাল মিলিয়ে চারটি সাপকে ফনা উঁচিয়ে নাচানোর চেষ্টা করেন। যে দল সাপগুলো বেশি সময় ধরে ফনা উঁচিয়ে রাখতে সমর্থ হয় সেই দলই মূলত বেশি পয়েন্ট পায় বিচারকদের কাছ থেকে।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার সাপুড়ে লিটন সরকারের দল। দ্বিতীয় হয়েছে চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাট এলাকার সাপুড়ে মুহিদের দল আর তৃতীয় হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের আছান আলীর দল।
খেলা দেখতে আসা প্রবীণ দর্শনার্থী মহির জোয়ারদার বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ খেলা এখন আর সচরাচার দেখা যায় না। তবে আয়োজকরা এই খেলার আয়োজন করে সব বয়সী মানুষকে অনাবিল আনন্দ দিয়েছেন।
একই মনোভাব প্রকাশ করেন কুয়েত প্রবাসী দর্শনার্থী শমসের আলী।
২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সাপুড়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সাপ ভীতিকর প্রাণী হলেও মানুষের জন্য উপকারীও বটে। তাই সাপ না মেরে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই সাপখেলা দেখিয়ে আমরা আমাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করি। খেলায় অংশ নিয়ে যেমন দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে পেরেছি, তেমনি আমরাও খুশি।’
খেলার আয়োজক সাইদুর রহমান বিশ্বাস বলেন, সুন্দর পরিবেশে সব ধরনের মানুষের বিনোদনের জন্য ঝাপাং খেলার আয়োজন করতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত।
পাটিকাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, কুষ্টিয়ার সংস্কৃতি বিকাশের জন্য ঝাপাং খেলার আয়োজন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য হলেও এলাকার সর্বস্তরের নারী, পুরুষ ও শিশুরা আনন্দ উপভোগ করেছে।