ময়মনসিংহে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা
ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে ময়মনসিংহে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক রোগী। গত ১৯ জুন ‘ভুক্তভোগী’ স্বপন সরকার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাবেক অধ্যক্ষ ও কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক সি এন সরকারের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের মামলাটি দায়ের করেন। গতকাল রোববার শুনানির শেষে আদালত ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম সোহেল এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে অধ্যাপক সি এন সরকার এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আজ সোমবার রাতে এনটিভি অনলাইনের কাছে দাবি করেন, তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সঠিক চিকিৎসা দিয়েছেন। উপরন্তু তিনি অভিযোগ করেন, একটি মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর কাছে টাকা দাবি করেছিল। সেই টাকা না দেওয়ার কারণেই মামলা করা হয়েছে। রোগীর চিকিৎসাপত্রসহ সব প্রমাণপত্র তাঁর হাতে রয়েছে। তিনি আদালতে মামলা লড়বেন।
বাদী স্বপন সরকার (৫০) ময়মনসিংহ শহরের ২৭ নম্বর দুর্গাবাড়ী রোডের ‘তরুণ বোর্ডিং হোটেল’-এর ব্যবস্থাপক। তাঁর গ্রামের বাড়ি তারাকান্দা থানায়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ‘স্বপন অসুস্থ হয়ে ২০১৩ সালের ২১ জুলাই শহরের দুর্গাবাড়ী রোডের সি এন সরকারের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে যান। চিকিৎসক কোনো ধরনের যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে রোগীর যক্ষা বা টিবি রোগ হয়েছে বলে চিকিৎসাপত্র দেন। চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার পর সমস্যা দেখা দিলে রোগী দুই মাস পর ২১ সেপ্টেম্বর পুনরায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।’
এরপর চিকিৎসক স্বপন সরকারকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। পরে রোগী জানতে পারেন টিবি রোগ হয়েছে কি না- তা নিশ্চিত না হয়েই তাঁকে টিবি রোগের চিকিৎসাপত্র দেওয়ায় তিনি ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। পরে তাঁর গ্রামের বাড়ি তারাকান্দায় ব্র্যাক সেন্টারে টিবি রোগের চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। ব্র্যাক চিকিৎসাকেন্দ্রে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানানো হয়, তাঁর আসলে টিবি রোগ হয়নি। তাঁকে টিবির ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন কেন্দ্রের চিকিৎসক।
পরে স্বপন সরকার বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নিয়ামুল হকের কাছে যান। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি চিকিৎসাপত্রে নোট দেন ভুল ওষুধ খাওয়ার কারণে রোগীর চোখের সমস্যা দেখা দেয়। নিয়ামুল হক চিকিৎসক সি এন সরকারের লেখা ওষুধ খাওয়া বন্ধের নিদের্শ দেন। সেই সাথে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলেন।
পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সার্জন কামরুল ইসলাম ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ সাইফুল ইসলামও ভুল চিকিৎসার মতামত দেন।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ স্বপন সরকার ভারতের কলকাতায় শংকর নেত্রালয়ে যান। সেখানেও চিকিৎসকরা ভুল চিকিৎসার কথা বলেন। একই বছরের ২৫ জুলাই তিনি তামিলনাডুর বেলুড়ের খিস্ট্রান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
দেশ-বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করেন বাদী। এ নিয়ে চিকিৎসক সি এন সরকারের সাথে দেন-দরবার করে কোনো সুরাহ না হওয়ায় চলতি বছর ১ জানুয়ারি তাঁকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়।
এতে চিকিৎসক কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় মামলা করা হয়।
এ বিষয়ে চিকিৎসক সি এন সরকার বলেন, ‘রোগী স্বপন সরকার যখন আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসে তখন তাঁর কাশের সাথে রক্ত যেত। আমি তখন রোগীর এক্সরেসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাই। এতে আমার দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখতে পাই রোগীর টিবি হয়েছে। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন যে চিকিৎসা সেটিই তাঁকে দেওয়া হয়। প্রায় আড়াই মাস পর সে আবার আমার কাছে আসে। এর আগে সে একজন চক্ষু চিকিৎসককে দেখায়। এসব প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।’
‘আর টিবি রোগের ওষুধ খেয়ে চক্ষু নষ্ট হয়েছে এমন নজির আমার জানা মতে নেই। আমি নিজেও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। উপরন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মহল আমার কাছে টাকা দাবি করে। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করি। তার জের ধরেই এ মামলা হয়েছে বলে আমি মনে করি’- বলেন চিকিৎসক সি এন সরকার।