পায়ে লিখে পাপিয়া পাস
দুই হাত অকেজো। কাজ চলে পা দিয়ে। দরিদ্রতা গোটা পরিবারকে গ্রাস করলেও প্রতিবন্ধী ববিতা আখতার পাপিয়ার ইচ্ছাশক্তিকে দমাতে পারেনি। পা দিয়ে লিখে মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে সে। পেয়েছে জিপিএ ২ দশমিক ৫০ পয়েন্ট।
জন্ম থেকে দুই হাতে কোনো শক্তি না পাওয়ায় পাপিয়াকে পা দিয়েই লেখাপড়াসহ সব কাজ চালাতে হয়। এর আগে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়ে পাস করে সে। পাপিয়াকে নিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি এনটিভি অনলাইন ও ৪ ফেব্রুয়ারি এনটিভিতে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পাপিয়ার ইচ্ছা সমাজের আর পাঁচটা মেয়ের মতো সেও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। শিক্ষিকা হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান করবে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এসএসসির ফলাফল জানার পর পাপিয়াদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অভাবের সংসারে যে যার মতো ব্যস্ত। পাপিয়ার বাবা গেছেন মাঠে গরুর ঘাস আনতে। মা গেছেন পাশের বাড়ির ছাদে শুকাতে দেওয়া ধান তুলতে। বোনকে নিয়ে পাপিয়া গেছে বাড়ির পাশের বাগানে ছাগল চরাতে।
প্রতিবেশীদের দিয়ে ডাকানোর পর প্রতিক্রিয়ায় পাপিয়া বলে, ‘পাসের খবর জানার পর এত ভালো লেগেছে যে আনন্দে হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পাছিলাম না।’ পাপিয়া আরো বলে, ‘আমি কলেজে ভর্তি হব, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হব।’
পাপিয়ার মা আরিফা খাতুন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়েকে লেখাপড়া করাতে হচ্ছে। তার হাত অকেজো হওয়ার কারণে অনেক কষ্ট হয়। আমার মেয়েকে যেন সমাজে অবহেলায় কাটাতে না হয় সে জন্য সে যতদূর পড়বে তাকে লেখাপড়া করাব।’
তবে পাপিয়ার এই ফলাফলে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার ভাই আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, তাঁর চিন্তা এখন কী করে বোনের স্বপ্ন পূরণ করবেন। তিনি জানান, ২০০৮ সালে পাপিয়ার জন্য প্রতিবন্ধীর সার্টিফিকেট চেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। বর্তমানে বই-খাতা কিনে দেওয়ার মতো অর্থ এখন তাদের নেই। ফলে যে কোনো সময় তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে পাপিয়ার অদম্য ইচ্ছাপূরণে তার সহপাঠীরা বইসহ পোশাক পরানো, নোট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে বিগত দিনে। সহপাঠীদের বিশ্বাস পাপিয়া একদিন অনেক বড় হবে। মানুষ গড়ার কারিগর হবে। পাপিয়া প্রতিবন্ধী হলেও তার মেধা প্রখর।
ঝাউবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তুহিন রেজা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ছিল ববিতা আকতার পাপিয়া পাস করবে। সে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। তার অদম্য ইচ্ছাই তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।’