২০ মের আগে আম নামানো যাবে না
আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছরও গাছ থেকে আম নামানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত এই সময় অনুযায়ী আগামী ২০ মের আগে গাছ থেকে কোনো আম নামানো যাবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আম ক্যালেন্ডার প্রণয়নবিষয়ক এক সভায় এ সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
অপরিপক্ব আম বাজারজাতকরণ রোধ ও রাসায়নিকমুক্ত নিরাপদ আম বাজারজাত করার লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তৌফিকুল ইসলাম, হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হুদা ও নাচোল উপজেলার চেয়ারম্যান আবদুল কাদের।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২০ মের আগে গাছ থেকে কোনো আম নামানো যাবে না। তবে ওই দিন থেকে কেবল গুটি জাতের আম নামানো যাবে। বাণিজ্যিক জাতের আম গোপালভোগ নামবে ২৫ মে থেকে। হিমসাগর বা ক্ষীরসা নামানো যাবে ২৮ মে থেকে, ল্যাংড়া বা বোম্বাই ৫ জুন, ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ১ জুলাই থেকে নামানো যাবে।
এদিকে, মেহেরপুরেও বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ‘নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতভেদে আম বাজারজাত করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহর সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরাফ উদ্দিন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার (এসপি) আনিছুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, বারাদি হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক জাহিদুল আমিন, সদর উপজেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা স্বপন কুমার সাহা, আম ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন খান, আমচাষি আবদুল কুদ্দুস ও হারুণ অর রশিদ।
এ সময় ড. শরাফ উদ্দিন বলেন, একটি পরিপক্ব আম পানিতে ভাসে না, সেটি পানিতে ডুবে যাবে। আম পরিপক্ব হলে তার রং, গুণগত মান ও স্বাদ সবকিছুই ভালো হবে। দেশ-বিদেশের বাজারে তার মূল্যমানও ভালো হবে।
ড. শরাফ উদ্দিন আরো বলেন, একটি আমের ওজন প্রতিদিন পাঁচ গ্রাম করে বাড়তে থাকে। ফলে পরিপক্ব না করে আম বাজারজাত করা হলে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মেহেরপুরের ভৌগোলিক আবহাওয়ার বিচারে গোপালভোগ ১৫ মে, হিমসাগর ২০ মে, ল্যাংড়া আম ৩০ মে থেকে বাজারজাত করা হলে সঠিক ওজন ও স্বাদ বজায় থাকবে। তিনি আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের এ নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলায় দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ হচ্ছে হিমসাগর। এই হিমসাগর আমকে দেশের মধ্যে ব্র্যান্ডিং করার জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে। সেই হিসেবে গত বছর ১২ টন হিমসাগর আম বিদেশে রপ্তানি হলেও এ বছর ২০০ টন রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সভায় গোপালভোগ ১৫ মে, হিমসাগর ২০ মে, ল্যাংড়া ৩০ মে, আম্রপালি জুনের শেষ সপ্তাহ, মল্লিকা ও বিশ্বনাথ জাতের আম জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারজাতকরণের সময় নির্ধারণ করেন দেন জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ।
এর দু-একদিন আগে যদি কোনো বাগানে আম পেকে যায়, তবে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য আম ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জেলা প্রশাসক।
সভায় ভিডিও কনফারেন্সেরের মাধ্যমে গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ওই এলাকার আম ব্যবসায়ী ও চাষিরাও অংশ নেন।