কক্সবাজারে বন্যায় আটজনের মৃত্যু
কক্সবাজারের রামু উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে, বাড়ির দেয়াল ও পাহাড় ধসে ছয়জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিনে গাছ চাপা পড়ে এক মা ও তাঁর চার বছর বয়সী ছেলের মৃত্যু হয়েছে। চকরিয়ায় একজন এবং রামুতে দুজন পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় রামু, চকরিয়া, সদর, পেকুয়াসহ আট উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়েছে কমপক্ষে চার লাখ মানুষ।
রামু উপজেলার পাহাড়ি ঢলে নিহত ব্যক্তিরা হলেন খাদিজা বেগম (৩৫), হালিমা বেগম (২৭), মোহাম্মদ রিদুয়ান (৬) ও জুনু মিয়া (৬০)। উপজেলার কাউয়াখোপ এলাকায় বাড়ির মাটির দেয়াল ধসে মারা গেছেন আমির হোসেন (৪০) নামের এক ব্যক্তি। গাছ চাপা পড়ে সেন্ট মার্টিনের কোনারপাড়ায় মারা গেছেন নূর মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫) ও ছেলে মোহাম্মদ জিশান (৪)। কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ ঘোনারপাড়া এলাকার পাহাড় ধসে মো. আবছার (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিল্লোল বিশ্বাস জানান, উপজেলার কচ্ছপিয়া, উখিয়ার ঘোনা, কাউয়াখোপ ও জোয়ারিয়া নালা এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ও আজ শুক্রবার সকালে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে খাদিজা, হালিমা, রিদুয়ান ও জুনুর মৃত্যু হয়। আজ দুপুরে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। কাউয়াখোপ এলাকায় বাড়ির মাটির দেয়ালধসে আমির হোসেন মারা গেছেন।
রামু উপজেলার আটটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাকখালী নদীর ঢলের তোড়ে রামু সদরের হাইটুপি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে বলেও ইউএনও জানান।
গত চারদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার বাঁকখালী, মাতা মুহুরীসহ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোচপাড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে মাতা মুহুরী নদীর পানিতে পৌরসভার ৫০ ভাগ এলাকা এবং ১৮টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
শহরে তিন স্থানে পাহাড়ধস
কক্সবাজার শহরের তিনটি স্থানে দুপুরে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে চারজন। নিহত শিশু মো. আবছার শহরের দক্ষিণ ঘোনারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি আরো জানান, সদরের সাতটি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম রহিম উল্লাহ।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের দক্ষিণ ঘোনারপাড়া এলাকার আকস্মিকভাবে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে। এ সময় বাড়ির উঠানে খেলা করছিল শিশু আবছারসহ কয়েকজন। পাহাড়ধসে চারজন মাটির নিচে চাপা পড়ে।
পরে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক আবছারকে মৃত ঘোষণা করেন।আহত অপর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ছাড়া কক্সবাজার শহরের ফাতেরঘোনা ও সাহিত্যিকা পল্লী এলাকায় পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় আরো তিনজন আহত হয়েছে। তাদেরও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পাহাড়ধসে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীনরা হলেন জয়নাব বেগম, মো. সাগর, আব্দুল মান্নান, শিশু উম্মে উর্মিলা, শিশু ইছমত আরা ও সাহারা খাতুন।
কক্সবাজার-টেকনাফ যান চলাচল বন্ধ
এ দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের লিংক রোড, রামুসহ কয়েকটি পয়েন্টে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় পাহাড়ের মাটি ও গাছ সড়কের ওপর ধসে পড়ায় যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। অপর দিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রামু-মরিচ্যা সড়ক ও রামু-পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সেন্ট মার্টিনে ক্ষয়ক্ষতি
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, আজ শুক্রবার সকালে সেন্ট মার্টিনে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় বহু গাছপালা, ঘরবাড়ি ও মসজিদ-মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নারকেল গাছ চাপা পড়ে এক মা ও তাঁর ছেলে মারা যান। এতে বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছে। কিন্তু দ্বীপের হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক না থাকায় আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ঝড়ো হাওয়ায় দ্বীপের সর্বত্র কম-বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এখনো শত শত বাড়ি পানির নিচে রয়েছে। সপ্তাহ ধরে ভারি বর্ষণ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে দ্বীপবাসী।