মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলা
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বরগুনার পাথরঘাটা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেলে পাথরঘাটা উপজেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি দায়েরের পর বিচারক মো. রেজওয়ানুজ্জামান মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। পাথরঘাটার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. মতিউর রহমানের ছেলে মো. মিজানুর রহমান মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলায় পাথরঘাটা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. আবদুল মান্নান হাওলাদার ছাড়াও তাঁর ছোট ভাই আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার, বোনের জামাই হজরত আলীসহ অজ্ঞাত আরো ১২-১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৯ জুন পাথারঘাটার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন শীলকে পাথরঘাটার চিহ্নিত রাজাকার জালালের বাড়ির সামনে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালান আবদুল মান্নান ও তাঁর সহযোগীরা। এতে ব্যর্থ হয়ে পরেরদিন চিত্তরঞ্জনের কাকা মুরেন্দ্র নাথকে হত্যার পর মরদেহ গুম করেন তাঁরা।
মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, মামলার বাদী মো. মিজানুর রহমানের বাবা মুক্তিযোদ্ধা মো. মতিয়ার রহমান এবং মামলার প্রথম সাক্ষী মনমথ মিস্ত্রির বাবা মনোহর মিস্ত্রিকেও সে সময় গুলি করে হত্যা করে অভিযুক্তরা। পরে তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়াও, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা, আলশামস, আলবদর ও রাজাকারদের কাছ থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে পাথরঘাটাসহ এর আশপাশের এলাকার নিরীহ ও সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি লুটপাটসহ গবাদি পশু ও গচ্ছিত সম্পদ লুট ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টিরও অভিযোগও আনা হয় মামলায়।
মামলার বাদী মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘ সময় পরে হলেও বাবার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এখন দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করছেন তিনি।
অবশ্য মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আবদুল মান্নান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি কোনো ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলেও তাঁর দাবি।
আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন মনোয়ার বলেন, আবদুল মান্নান একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের সময়ে তিনি কোনো ধরনের যুদ্ধবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আবদুল মান্নান সরাসরি যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও জানান তিনি।