মানুষের পেটে পাখির ছানা!
ডাহুক-ডাহুকির তাপ দেওয়ার ফলে ডিম থেকে বের হয় ছানা। এত দিন এমনটিই জানত সবাই। কিন্তু মানিকগঞ্জের এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, তিনি তাঁর পেটের ওপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় ডাহুক পাখির একটি ডিমে তাপ দিয়ে ছানার জন্ম দিয়েছেন।
ওই ছানা দেখতে এখন ভিড় করছেন সবাই। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চক মিরপুর ইউনিয়নের চখরিচরণ গ্রামের কৃষক শুকুর আলী শেখের (৬০) বাড়িতে। তিনি ছানাটিকে বাঁশের খাঁচায় রেখে পরিচর্যা করছেন। আশপাশের গ্রাম ও হাট-বাজারেও ছানাটিকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ছানাটিকে দেখতে ও ঘটনার রহস্য জানতে প্রতিদিন কৌতূহলী মানুষ তাঁর বাড়িতেও যাচ্ছে দলে দলে।
আজ সকালে কথা হয় শুকুর আলী, তাঁর স্ত্রী হাবিবা, ছেলে আলমগীর ও পুত্রবধূর সঙ্গে। তাঁরা সবাই জানান, বিষয়টি প্রথমে খারাপ লাগলেও পরে যখন সত্যিকারের ডাহুক ছানার জন্ম হয় তখন তাঁদের অনেক ভালো লেগেছে। এখন মনে হচ্ছে ছানাটি তাঁদের পরিবারের অন্যতম একজন।
শুকুর আলী জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছরও তিনি চখরিচরণ পূর্বপাড়ার চকে ২০ শতাংশ বর্গা জমিতে ইরি ধান রোপন করেন। প্রায় ২৫ দিন আগে তিনি ওই জমিতে আরো দুজন কৃষি শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে পাকা ধান কাটতে যান।
তাঁর ক্ষেতের পাশেই প্রতিবেশী রূপচান নামের আরেক কৃষকের ধানক্ষেত। সেই ক্ষেতে ধান গাছের গোড়ায় প্রথমে রূপচান দুটি ডিম দেখতে পান। ডিম দেখেই তিনি শুকুর আলীকে ডাক দেন। শুকুর আলী ডিমগুলো দেখে ডাহুক পাখির মনে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রথম দুই দিন তিনি গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে খোঁজ করেন দেশি প্রজাতির কোনো মুরগি বাচ্চা ফুটাতে ডিমে তাপ দিচ্ছে কি না। কিন্তু তা না পেয়ে কী করা যায় ভাবছিলেন। এমন সময় নাতনি নিলুফা ঠাট্টা করে বলে, ‘দাদা তুমি নিজেই ডিমে তা দেও।’ কথাটি শুনে শুকুর নিজেই ইচ্ছা পোষণ করেন ডাহুকের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে তিনি নিজেই তাপ দেবেন।
২০ দিনের অধ্যবসায়
শুকুর আলী জানান, একটি পাকা নারকেলের অর্ধেক মালাইতে তুলা ও কিছু গরম কাপড় দিয়ে দুটি ডিম বসান। এরপর তিনি নিজের তলপেটে গামছা দিয়ে মালাইটি শক্ত করে বেঁধে নেন। একটানা মালাইটি পেটে বেঁধে রাখায় প্রতিদিন গোসল করতেও পারেননি। খাওয়া-দাওয়া এমনকি ঘুমিয়েছেন ডিম ভরা মালাই পেটে বেঁধেই।
ঘটনার ১২ দিন পর শুকুর আলী দেখতে পান, একটি ডিম ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। সেখান থেকে ডিমটি ফেলে দেন। হতাশ না হয়ে শুকুর আলী আরেকটি ডিম নিয়েই অপেক্ষা করতে থাকেন। ২০ দিন পর ওই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে। এরপর বাচ্চাটির পরিচর্যা শুরু করেন তিনি। কয়েকদিনের মধ্যেই এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রতিদিন পাখির ছানাটিকে দেখতে আসছে শত শত উৎসুক মানুষ।
শুকুর আলী আরো জানান, ডাহুক ছানাটিকে তিনি পোষ মানাচ্ছেন। পোষ মানলেই খাঁচা থেকে বের করবেন। তা ছাড়া লালন-পালন করে পাখিটির বংশ বিস্তারের যাবতীয় ব্যবস্থা করবেন।
এদিকে ডাহুক ছানা দেখতে আসা রফিকুল ইসলাম জানান, মানুষের পেটে পাখির ছানা হয়েছে শুনে তিনি দেখতে এসেছেন। পাখি প্রেমিক বলেই শুকুর আলী ধৈর্য সহকারে পেটের তাপ দিয়ে তা ফুটাতে পেরেছেন।
চক মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন জানান, মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই, শুকুর ভাই তা প্রমাণ করলেন। এ রকম ধৈর্যশীল ব্যক্তি এই ইউনিয়নের বাসিন্দা। এ জন্য তিনি আনন্দিত।
মানুষের পেটে তাপ দিয়ে ডাহুক পাখির ছানা জন্মাতে পারে কি না এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. খাঁন শহিদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, যদি একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ২০ দিনের মত ডিম তা দিয়ে কোন মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে করতে পারলে তাহলে তা সম্ভব। তবে তা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া অনেক দুঃসাধ্য ব্যাপার। শুকুর আলী যে কাজটি করেছেন তা প্রশংসনীয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল হালিম বলেন, ডাহুক পাখি তাদের বাসায় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ডিমে তা দেয়। এরপর সেখান থেকে ছানা বের হয়। ওই ডিম মানুষের পেটে তাপ দিয়ে ছানা জন্মানো দুঃসাধ্য ব্যাপার।
যদি সত্যিই সেটা হয়ে থাকে তবে অলৌকিক কাজ হয়েছে। তিনি জেলার লাইভস্টক কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন। এরপর তিনি নিশ্চিত করে জানাতে পারবেন।