বেতন-বোনাসের বদলে চিনি!
ঈদের আগে স্বাভাবিক নিয়মে বেতন-বোনাস পাওয়ার কথা কারখানার শ্রমিকদের। অথচ নগদ টাকার পরিবর্তে তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিনি। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনা সুগার মিলে।
কারখানার গুদামে ১০ হাজার মেট্রিক টন অবিক্রীত চিনি এবং নগদ টাকা না থাকায় আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস পরিশোধের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পাবনা সুগার মিল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।
পাবনা সুগার মিলের শ্রমিক নেতা আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, লোকসানের দোহাই দিয়ে পাবনা সুগার মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের মাসের পর মাস বেতন বকেয়া রাখে। ঈদের আগে যখন বেতনের জন্য চাপ দেওয়া হয়, তখন মিল কর্তৃপক্ষ বেতনের বদলে চিনি দেওয়া শুরু করে। ওই চিনি নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে গেলেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শ্রমিকদের। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি অসাধু চক্র মিল গেটে বাজারের তুলনায় বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা কমে চিনি কিনছে।
এদিকে তিন-চার মাস ধরে বেতন না পেয়ে অনেক শ্রমিককেই ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে জানিয়ে উজ্জ্বল বলেন, এক রকম বাধ্য হয়েই তাঁরা বেতনের টাকা হিসেবে চিনির বস্তা নিচ্ছেন। সেই চিনি নিয়ে মিল গেটেই লোকসানে বিক্রি করছেন। নগদ টাকার বদলে চিনি দেওয়ায় শ্রমিকরা চরম বিপদের মধ্যে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।
পাবনা সুগার মিলের কর্মচারী সোলায়মান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নয় হাজার টাকার বেতনের বদলে চিনি নিয়ে আমাকে প্রায় এক হাজার টাকা লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে পাওনাদারদের ভয়ে বাধ্য হয়েই বেতনের বদলে চিনি নিয়েছি।’
পাবনা চিনিকলের একাধিক শ্রমিক জানান, মিলগেটে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৩৭ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৪২ টাকা দরে বিক্রির জন্য নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু মিল গেটে চিনি বিক্রি হয় না। বাজারে আমদানি করা চিনি দেশি চিনির চেয়ে বেশি সাদা পরিষ্কার হওয়ায় মিষ্টি ব্যবসায়ীরা আমদানি করা চিনি কেনেন। দেশি চিনি গুণে ও মানে উন্নত হলেও শুধু রং একটু লালচে হওয়ায় ক্রেতারা তা কেনেন না।
এ ব্যাপারে পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বেতনের পরিবর্তে চিনি দেওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। তিন মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা। অন্যদিকে মিলের গুদামে পড়ে আছে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি, যার মূল্য তিন কোটি ৭০ লাখ টাকা। নগদ অর্থ না থাকায় অবিক্রীত চিনি দিয়ে বকেয়া বেতনের সমন্বয় করা হচ্ছে।
তবে চিনি নেওয়ায় কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না দাবি করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেসব শ্রমিক-কর্মচারী বেতন বাবদ টাকার পরিবর্তে চিনি নিতে চাচ্ছেন শুধু তাঁদের দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) নির্দেশনা মোতাবেক এই কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে মিলগেটেই দালালদের কাছে শ্রমিকদের কম দামে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে এবং এতে তাঁরা বিপাকে পড়ছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।