জান্নাতিকে তুলে নিয়ে গেছে জ্বিন!
বরগুনায় নিখোঁজের সাতদিনেও উদ্ধার হয়নি মাদ্রাসাছাত্রী। গত ২৬ মে বিকেলে শহরের ডিকেপি সড়কের বটতলা এলাকার জান্নাতুল মাওয়া মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয় সে।
ওই ছাত্রীর নাম জান্নাতি (১৪)। জান্নাতির বাবা মো. গোলাম সরোয়ার একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। অবসরে যাওয়ার পর তিনি নিজ এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন সেই দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
জান্নাতুল মাওয়া মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক আবদুল আউয়াল সিরাজ (৫০) দাবি করেছেন, জান্নাতিকে জ্বিন তুলে নিয়ে গেছে।
জান্নাতিকে খুঁজে না পেয়ে ৩০ মে বরগুনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি অপহরণ মামলা করেছেন তাঁর মা মাহফুজা বেগম। আসামি করা হয়েছে মাদ্রাসার পরিচালক আবদুল আউয়াল সিরাজ ও তাঁর স্ত্রী চম্পা বেগমকে। পরে ওই দিনই সিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার বিবরণী ও নিখোঁজ জান্নাতির পরিবার সূত্রে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ফুলতলা-কুমড়াখালী গ্রামের মো. গোলাম সরোয়ারের দুই মেয়ের মধ্যে জান্নাতি ছোট। ২০১৩ সালে জান্নাতি স্থানীয় ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর বরগুনার কলেজ রোড এলাকার খাদিজাতুল কোবরা মহিলা হাফেজি মাদ্রাসায় এক বছর পড়াশোনা করে জান্নাতি। পরে মানসম্মত পড়াশোনার জন্য খাদিজাতুল কোবরা মাদ্রাসা থেকে তিন মাস আগে জান্নাতুল মাওয়া মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়।
জান্নাতির মা মাহফুজা বেগম জানান, গত ২৫ মে মাদ্রাসা থেকে একদিনের জন্য জান্নাতিকে বাড়ি নিয়ে আসেন তিনি। পরের দিন বিকেলে আবদুল আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী চম্পা বেগম তাঁদের বাড়ি এসে জান্নাতিকে মাদ্রাসার উদ্দেশে নিয়ে যান। এরপর রাত ৮টার দিকে চম্পা বেগম তাঁকে মুঠোফোনে জানান, জান্নাতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। এর পর থেকে জান্নাতিকে আজও পাওয়া যায়নি।
মাদ্রাসার পরিচালক আবদুল আউয়াল সিরাজ গ্রেপ্তারের পর বরগুনা থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জান্নাতি নিখোঁজ বা অপহরণের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। জান্নাতিকে জ্বিন নিয়ে গেছে। কিছুদিন পর জান্নাতিকে আবার জ্বিন ফিরিয়ে দিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও চম্পা বেগমকে পাওয়া যায়নি।
জান্নাতুল মাওয়া মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাহফুজা বেগম বলেন, ঘটনার দিন তিনি মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন না। তবে তিনি শুনেছেন, বেড়ানো শেষে বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় ফেরার পর জান্নাতির মন খুব খারাপ ছিল। এর পর থেকে জান্নাতির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মশিউর রহমান জানান, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসার পরিচালক সিরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদুজ জামান বলেন, মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ড শেষে না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
মাদ্রাসার পরিচালক আবদুল আউয়াল সিরাজের বিরুদ্ধে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এটিবি) সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বরগুনা থানায় মামলা রয়েছে। ওই সংগঠনের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দীন আনসারীর সঙ্গে বৈঠক করার সময় ২০১৩ সালে ১২ আগস্ট বরগুনার খাজুরতলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।