এক যুগপূর্তি
এনটিভির পথচলার গল্প
দিনটি ছিল ঠিক একযুগ আগের ৩ জুলাই। শুরু হয়েছিল দেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এনটিভির পথচলা। আর বছর না ঘুরতেই দেশ-বিদেশকে জানা ও দেখার এক খোলা জানালা হয়ে ওঠে এনটিভি। পরের দিনগুলো শুধুই এগিয়ে চলার। যার প্রতিটি ক্ষণের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার আছে দেশ-বিদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগণিত দর্শকের ভালোলাগা, ভালোবাসা।
urgentPhoto
এর মাঝেই হঠাৎ ঘটে ছন্দপতন। ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। আগুনে পুড়ে ক্ষণিকের জন্য থেমে যায় এনটিভির স্বপ্নযাত্রা। ক্ষণিকই বটে, কারণ মাত্র মাসখানেকের মধ্যেই আবার শুরু হয় পথচলা। ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ যার মূলমন্ত্র, তার কি আর থেমে থাকলে চলে। ঘুরে দাঁড়ানোর সে লড়াইয়ে এনটিভির সঙ্গে ছিলেন অগণিত দর্শক, শুভাকাঙ্ক্ষী, কলাকুশলী, বিজ্ঞাপনদাতা, কেবল অপারেটরসহ হাজারো মানুষ। এভাবেই নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েই এনটিভি আজ দেশে-বিদেশে দর্শকনন্দিত চ্যানেল।
ফলশ্রুতিতে মিলেছে সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সম্মানও। ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দেশের প্রথম টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন- আইএসও ৯০০১:২০০৮ সনদ পায় এনটিভি।
যুগপূর্তির এই দিনে এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘যাত্রার শুরুর দিন থেকেই প্রযুক্তির সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছে এনটিভি। চ্যানেলটি যখন যাত্রা শুরু করে, তখন বাংলাদেশে মাত্র তিনটি চ্যানেল ছিল। আমি দেশের বাইরে গেলেই প্রবাসীরা বলত, আমরা কীভাবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারি? এখানে যেসব ছেলেমেয়ে আছে, তারা এবং আমরা কীভাবে দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারি? তখন থেকেই চিন্তা করেছি দেশকে তুলে ধরতে গেলে একটি মিডিয়াই সবচেয়ে বড় মাধ্যম, যার সাহায্যে দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করা যায়। সেই থেকেই এনটিভির যাত্রা শুরু।’
এনটিভিতে দেশসেরা সব সংবাদকর্মী ও কলাকুশলী কাজ করছেন জানিয়ে চ্যানেলটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলী আরো বলেন, সেরা কর্মীদের সমন্বয়ে এনটিভি আজ দেশের সেরা চ্যানেল।
এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগ বরাবরের মতোই এখনো মানকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বাছাই করা দক্ষ কর্মীদের চোখটাও যেন একটু খুঁতখুঁতেই। নিয়মের ব্যত্যয় হলেই আর কোনো ছাড় নেই। সে কারণেই শুরুর দিনটি থেকে এখনো এনটিভির অনুষ্ঠান মানেই আলাদা কিছু, একটু অন্য রকম কিছু।
এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ জানান, ‘কয়েকটি বিষয়কে আমরা খুব গুরুত্ব দিই অনুষ্ঠান পরিকল্পনার ক্ষেত্রে। নৈতিক মূল্যবোধ, রুচিশীল অনুষ্ঠান এবং পরিবার নিয়ে যেন সব দর্শক আমাদের সব অনুষ্ঠান দেখতে পারে এই বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এনটিভির মূল লক্ষ্য ছিল, নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার। নতুন নির্মাতা খুঁজে বের করার। আজ বলতে দ্বিধা নেই, যাঁদের শুরু এনটিভি দিয়ে, তাঁদের অনেকেই আজ মিডিয়াজগতে যোগ্য আসন লাভ করেছেন।’
সংবাদকে বরাবরই আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে এনটিভি। দেশের অলি-গলি-পথ ঘুরে এনটিভির সংবাদকর্মীরা খুঁজে ফিরেছেন ঘটনার পেছনের খবর। সময়ের প্রয়োজনে ছুটে গেছেন আটলান্টিক আর প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারেও। আর প্রতিদিনের আলোচিত, বৈচিত্র্যময়, অনুসন্ধানী সংবাদগুলোও তো নিজস্ব ঢঙে উপস্থাপন করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। আর এসব কিছুই শুধু দর্শক আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা মাথায় রেখে। তাই তো ক্যামেরার চোখে চোখ রেখে ভালো ছবিটা পাওয়ার আশায় আশপাশের সবকিছু ভুলে যান ক্যামেরাপারসনরা। তারপর যে ছবিটা এনটিভির পর্দায় দেখা যায়, তা তৈরির পেছনেও আছে এমন অসংখ্য কাজপাগল মানুষের নিষ্ঠা আর দৃঢ় প্রত্যয়ের না দেখা গল্প।
এনটিভির বার্তাপ্রধান খায়রুল আনোয়ার বলেন, ‘গত ১২ বছরে দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে হাজারো ঘটনা ঘটে গেছে। এনটিভি চেষ্টা করেছে সবগুলো ঘটনার সঙ্গে থাকার। এনটিভির শুরু থেকেই সম্পাদকীয় নীতি ছিল-নিরপেক্ষভাবে, বস্তুনিষ্ঠভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করা। সেই নীতিই অনুসরণ করে গেছে এনটিভি। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও অন্যান্য খবরের জন্য এনটিভির সংবাদকর্মীরা জিতে নিয়েছে অসংখ্য পুরস্কার।’ এনটিভির বার্তাকক্ষ সব সময় সর্বক্ষণ সচল থাকে বলেও জানান তিনি।
এনটিভির আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং। প্রতিষ্ঠানের সবকিছুই যাতে ঠিকঠাকভাবে চলে, সে জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের প্রতিটি কর্মকর্তার। এনটিভির মান প্রশ্নাতীতভাবে অটুট রাখতে তারাও সূচনালগ্ন থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সমস্ত হিসাব-নিকাশ রাখেন অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মকর্তারা। ভালো সংবাদ আর অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে সব সময়ই পাশে থাকেন তাঁরা।
এনটিভিতে কর্মরত শত শত মানুষের নিত্যদিনের শত চাওয়ার জোগান দিয়ে থাকে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রশাসন বিভাগ। সবার আনন্দেও ভাগিদার হতে যেমন তাঁরা কুণ্ঠিত হন না, তেমনি বিপদে আপদে ছুটে যেতেও এতটুকু কার্পণ্য নেই তাঁদের। দিনের সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছে কি না তা দেখভাল, আর প্রতিষ্ঠানের যে কারো যে কোনো সমস্যা কীভাবে দ্রুত সমাধান করা যায়, তা নিয়েই সদা ব্যতিব্যস্ত থাকেন এই বিভাগের প্রত্যেক কর্মকর্তা।
আর এনটিভির সংবাদকর্মী ও কর্মীদের প্রতিদিনের সবার এই নিরন্তর ছুটে চলা সবই দর্শক আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য। বাংলাদেশকে একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চায় এনটিভি। আর এই স্বপ্নযাত্রায় সারথি হতে চান প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি কর্মী। আর সেই চিত্রটা দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষের সামনে তুলে ধরতে সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা থাকে এনটিভির কর্মীদের। সবারই স্বপ্ন, সময়কে ধারণ করে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে সবার প্রিয় চ্যানেল এনটিভি।